শুভদীপ শর্মা, ময়নাগুড়ি: এ যেন ‘কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ’। একদিকে যখন ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে হাসপাতাল কিংবা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে, ঠিক তখনই ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ও দোকানপাট থেকে নানা সামগ্রী হাতিয়ে নিল একদল সুযোগসন্ধানী। ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসলীলার পাশাপাশি চুরির ঘটনায় আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়েছেন বাসিন্দাদের অনেকেই।
উল্লেখ্য, রবিবার বিকেলের কয়েক মিনিটের ঝড়ে ময়নাগুড়ি (Maynaguri) ব্লকের বার্নিশ, ধর্মপুর ও মাধবডাঙ্গা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সহস্রাধিক ঘরবাড়ি। কোনও বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়েছে, আবার কোনও বাড়ির টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বহু দোকানপাট। আহতও হয়েছেন অনেকে। একদিকে যখন ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় বাসিন্দারা আহত হয়ে হাসপাতালে অথবা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন, অন্যদিকে ওই সময়েই একের পর এক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে ঘটে চলেছে চুরির ঘটনা। ঝড় থেমে যাওয়ার পর মূল্যবান সামগ্রী যতটুকু অবশিষ্ট ছিল, সেগুলি হাতিয়ে নিতে দেখা গিয়েছে একদল দুষ্কৃতীকে।
বার্নিশ গ্রাম পঞ্চায়েতের কায়েতপাড়া মোড়ে গালামাল দোকান রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা সূর্যমোহন রায়ের। তিনি জানান, ঝড়ে তাঁর গালামাল দোকানটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেলেও ওজন মাপক বৈদ্যুতিক যন্ত্রটি অক্ষত ছিল। কিন্তু ঝড় থেমে যাওয়ার পর তিনি যখন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া জিনিসগুলি একে একে ভেঙে পড়া দোকান থেকে বের করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সে সময়েই সুযোগ বুঝে কেউ বা কারা সেটি নিয়ে উধাও হয়ে যায়। হরেন রায় নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার অভিযোগ, তাঁর মতো অনেকেরই বাড়ির টিনের চাল উড়ে গিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে পড়েছে। কিন্তু সেগুলি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেউ বা কারা সেগুলি নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন। বার্নিশ গ্রাম পঞ্চায়েতের পুঁটিমারি এলাকার বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর সুকুমার অধিকারীর কথায়, ‘ঘর ভেঙে যাওয়ায় রাতে ত্রাণ শিবিরে ছিলাম। সকালে বাড়ি গিয়ে দেখি জল তোলার পাম্পসেটটি উধাও। রাতের অন্ধকারে কেউ সেটি খুলে নিয়ে গিয়েছে।’
এদিন ঝড়ের (Storm) পর উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার পাশাপাশি ময়নাগুড়ি রোড পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের সদস্য এলাকায় মাইকিং করে আবেদন জানিয়েছিলেন, কেউ কোনও জিনিসপত্র পেয়ে থাকলে সেগুলি যেন প্রশাসনের কাছে জমা দেন। সংগঠনটির সম্পাদক নন্দু রায় বলেন, ‘মানুষের এমন বিপদের দিনে যাঁরা সহায়তার হাত বাড়িয়ে না দিয়ে এমন ঘৃণ্য কাজ করেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ ময়নাগুড়ি থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে যথেষ্ট পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তারপরও এই ধরনের ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।