গৌতম সরকার ও শুভ্রজিৎ বিশ্বাস, মেখলিগঞ্জ: বদলা নেওয়ার এক অদ্ভুত উপাখ্যান। ১৭ মাস আগের ঘটনা। এক বাংলাদেশি পাচারকারী বিএসএফের (BSF) হাতে ধরা পড়ে যায়। বদলা নিতে ওই রাতেই বাংলাদেশের একদল দুষ্কৃতী বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মেখলিগঞ্জ (Mekhliganj) শহর সংলগ্ন ১৩০ ভোটবাড়ি গ্রামের কৃষক শম্ভু সিংহ সরকারকে তুলে নিয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে চোরাপথে ভারতের বাড়ি থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। শম্ভুর পরিবারের দাবি, তুলে নিয়ে যাবার সময় আটক পাচারকারীকে ছেড়ে দেওয়া হলে তাঁকেও ছেড়ে দেওয়া হবে তাও দুষ্কৃতীদের তরফে শম্ভুকে বলা হয়েছিল।
বিনা অপরাধে শম্ভুকে বাংলাদেশের (Bangladesh) লালমণিরহাট জেলে থাকতে হয়। ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে তাঁকে বাংলাদেশের জেলে প্রায় দেড় বছর সময় কাটাতে হয়। অবশেষে মুক্তি পেয়ে মঙ্গলবার তিনি ভারতে ফিরলেন। পরিবারের সদস্যরা খুব খুশি হলেও তাঁরা সীমান্ত এলাকার কৃষকদের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছেন। এদিন চ্যাংরাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে শম্ভুকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। পুলিশের মেখলিগঞ্জ সার্কেল ইনস্পেকটর ডালিম অধিকারী, ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ওসি সুরজিৎ বিশ্বাস, বিএসএফের ১৫১ ব্যাটালিয়নের এসএস সনোয়াল প্রমুখ হাজির ছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশ ও বিজিবি আধকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। এদিন শম্ভুকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ভাইপো গৌতম সিংহ সরকার, প্রতিবেশী গৌরাঙ্গ রায় চ্যাংরাবান্ধা চেকপোস্টে এসেছিলেন।
শম্ভু বলেন, ‘ওইদিন রাতে বাংলাদেশের দুষ্কৃতীরা আমাকে যেভাবে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। পরে অনুপ্রবেশকারী সাজিয়ে ছবিও তোলা হয়। বিজিবি আমাকে বাংলাদেশের পাটগ্রাম থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কিছুদিন পর লালমণিরহাট জেল আমার ঠিকানা হয়। প্রচণ্ড কষ্টে একটার পর একটা দিন কেটেছে।’
শম্ভুর মুক্তিতে জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত রায়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। সাংসদ বলেন ‘শম্ভু বাংলাদেশের জেলে ছিলেন। নবান্ন, হাইকমিশন অফিসে দীর্ঘদিন কোনও সুরাহা না পেয়ে শম্ভুর দাদা কুমারেশ সিংহ সরকার আমার কাছে যান। আমি ওঁকে আশ্বস্ত করি। প্রথমবারের চেষ্টা ব্যর্থ হলেও পরের প্রচেষ্টা সফল হয়। সহযোগিতা করার জন্য বিদেশ দপ্তরের সচিবকে ধন্যবাদ। এদিন শম্ভু বাড়ি ফেরার পর তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখাও করে এসেছি।’ সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন বলে জানান।