দীপেন রায়, মেখলিগঞ্জ: আর দশটা গ্রামের মতো কোচবিহারের (Coochbehar) মেখলিগঞ্জ (Mekhliganj) ব্লকের কুচলিবাড়ি গ্রামেও চলছে আলু, তামাক, ভুট্টা সহ বিভিন্ন শীতকালীন ফসলের চাষ। কৃষকদের ব্যস্ততাও তুঙ্গে। কুচলিবাড়ির ২০৭ বুথের একদিকে তিস্তা নদী, অন্যদিকে বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া। এই গ্রামে বছর ৪২-এর এক ব্যক্তি ভুট্টাখেতে কাজ করছিলেন। গ্রামের রাস্তার ধারে জটলা বেঁধে কয়েকজন ফিশফিশ করে আলোচনা করছিলেন ওই ব্যক্তিকে নিয়ে। যিনি কৃষিশ্রমিকের কাজ করছেন তিনি শাসকদলের বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য (TMC Panchayat Member) অজিত সিদ্ধা। যেখানে তৃণমূলের ছোট-বড়-মাঝারি নেতারা রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠছে বলে অভিযোগ, সেখানে বাংলাদেশ সীমান্তের কুচলিবাড়িতে ভিন্ন চিত্র। তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য হয়েও অজিত সংসার চালাতে অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করছেন। নিজের বিঘে দুই জমি রয়েছে। তাতে চাষাবাদ করে সংসার চলে না। এদিকে সীমান্ত এলাকায় কর্মসংস্থানও নেই। তাই কৃষি মরশুমে অন্যের জমিতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করেন পঞ্চায়েত সদস্য। এ প্রসঙ্গে অজিত বলেন, ‘কর্মই ধর্ম। তাই কর্ম করে যাচ্ছি। নিজের সামান্য জমিতে চাষাবাদ করি। তাতে পাঁচজনের পরিবারের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। তাই কৃষি মরশুমে পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষকদের জমিতেও কাজ করি।’
স্থানীয় চাষি নিখিল সরকারের বক্তব্য, ‘কৃষিকাজে প্রয়োজন হলে ডাকলেই পাওয়া যায় অজিতকে।’ পঞ্চায়েত সদস্যকে দেখে উৎসাহ পাচ্ছেন এলাকার কৃষকরাও। স্থানীয় কৃষক সুধাংশু রায় বলেন, ‘এলাকার অনেক তরুণ কৃষিকাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাঁদের কাছে উদাহরণ আমাদের পঞ্চায়েত সদস্য।’ অজিত প্রথম দিকে বিজেপি করতেন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জয়ী হন। পরবর্তীতে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর দলের সঙ্গে মনোমালিন্যের জন্য দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটেই তিনি নির্বাচিত হন৷ যে দলই করুন সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক তাঁর। অজিতকে নিয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতা রতন রায়ের বক্তব্য, ‘চারিদিকে শুধুই চোরের পালা। তৃণমূলের চোরদের থেকে কিছুটা ভালো অজিত। তবে তাঁকে চোরের দলে মানায় না।’ পাশাপাশি রতন রায়ের কটাক্ষ, ‘তৃণমূলের রাজ্যজুড়ে যা উন্নয়ন সেখানে দাঁড়িয়ে একজন পঞ্চায়েত সদস্য যে মানুষের জমিতে কাজ করবে তা স্বাভাবিক।’