চাঁচলঃ নিজেদের শেষ সম্বল ১৫ কাঠা জমি বন্ধক (mortgaging land) দিয়ে ভিন রাজ্যে বেসরকারি হাসপাতাল (Private Hospital) থেকে পরিযায়ী শ্রমিকের মৃতদেহ (Migrant laborer dies) ঘরে ফেরাচ্ছে পরিবার। এলাকায় কাজ নেই। সাত দিন আগেই পঞ্জাবে (Punjab) রাইস মিলের কাজে গিয়েছিলেন চাঁচল ১ নং ব্লকের ধঞ্জনা গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস আলি(৪৫)। কিন্তু গিয়ে কাজে যোগ দিতে পারেননি। সেখানে পৌঁছে হঠাৎ পেটের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। সহকর্মীরা স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন ইলিয়াসকে। সেখানে তার অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু তারপরেও শেষ রক্ষা হয়নি। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় তার।
এদিকে সাত দিনের বকেয়া বিল না মেটালে মৃতদেহ ছাড়তে চাইছিল না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সহকর্মীদের কাছ থেকে এই খবর শুনে মাথায় বাজ পড়ে ইলিয়াসের পরিবারের। একদিকে মৃত্যুর দুঃসংবাদ অন্যদিকে বকেয়া বিল মেটানোর চাপ। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিলেন ইলিয়াস। এছাড়া পরিবারে রয়েছে স্ত্রী, দুই নাবালক সন্তান এবং এক যুবতী মেয়ে। শেষে বকেয়া বিল মেটানোর জন্য রাতারাতি নিজেদের শেষ সম্বল ১৫ কাঠা জমির বিনিময়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে সত্তর হাজার টাকা ধার নিয়ে ইলিয়াসের দেহ ফেরানোর ব্যবস্থা করেন তার অসহায় স্ত্রী।
পরিবারের লোক এবং প্রতিবেশীদের অভিযোগ এলাকায় কাজ নেই বলেই তো বাইরে যেতে হয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে এই করুণ পরিনতি। জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন কোনও সাহায্য করল না। শেষ সম্বলটুকুও চলে গেল। পরিবারের দাবি এবার সরকার অন্তত কিছু সাহায্য করুক। নয়তো এই তাঁদের পথে বসতে হবে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোররাতে শবদেহবাহী গাড়িতে পঞ্জাব থেকে দেহ নিয়ে রওনা হয়েছে সহকর্মীরা। শুক্রবার গভীর রাত বা শনিবার সকালে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর কথা। এই মৃত্যুর ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম।
স্থানীয় বাসিন্দা সাবির হোসেন বলেন, “জমি বন্ধক দিয়ে মৃতদেহ আনতে হচ্ছে। এর থেকে দুর্ভাগ্যের আর কি হতে পারে। সরকার পরিবারের পাশে না দাঁড়ালে প্রচন্ড সমস্যা হবে।” চাঁচলের বিধায়ক নীহার রঞ্জন ঘোষ জানান, “পরিবারটি ক্ষতিপূরণ পাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও পাশে আছি। খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।” চাঁচলের মহকুমা শাসক সৌভিক মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিওকে খোঁজ নিতে বলছি। নিয়ম অনুযায়ী যতটা প্রশাসনিক সাহায্য করা যায় আমরা করব।”