মাদারিহাট: অবশেষে দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রটি মিনি চিড়িয়াখানার রূপ পাওয়ার অপেক্ষায়। মাস্টার প্ল্যান ও মানচিত্র তৈরির কাজ শেষ। এবার প্রথমে রাজ্যের, পরে কেন্দ্রের আধিকারিকের স্বাক্ষরের অপেক্ষা। এই চিড়িয়াখানা তৈরির জন্য ২০১৯ সাল থেকে পরীক্ষা চলছিল। এবার এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য কাগজপত্র তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। আর এই কাগজপত্রে শুধু অপেক্ষা রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপালের স্বাক্ষর করা। স্বাক্ষর হলেই অনুমোদন পত্রটি জু অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই দপ্তরের রাজ্যের প্রতিনিধি সৌরভ চৌধুরী জানালেন, এই কাজ সম্পন্ন করতে মোট ছয়টি মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে এই মানচিত্র রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল পরীক্ষার পর স্বাক্ষর করবেন। সেই মানচিত্র চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জু অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার কাছে পাঠানো হয়। সঙ্গেই পাঠানো হবে ব্যায় বরাদ্দের পরিকল্পনা। তিনি আশাবাদী ৭ মার্চের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। তিনি জানালেন মাস্টার প্ল্যান তৈরি হয়ে গেছে। মুখ্য বনপালের স্বাক্ষর হয়ে গেলেই একসঙ্গেই সব কেন্দ্রে পাঠানো হবে।
সৌরভ বাবু জানালেন, তার হাত দিয়েই বেঙ্গল সাফারি সহ এই রাজ্যের ৬টি চিড়িয়াখানার কাজ হয়েছে। এখন বাকি আরও ছয়টি তৈরির। এরমধ্যে দক্ষিণ খয়েরবাড়ি,রসিকবিল রয়েছে। তিনি জানান দক্ষিণ খয়েরবাড়ির চিড়িয়াখানা তৈরির জন্য বিভিন্ন বিষয়ের ছয় রকম মানচিত্র তৈরি করতে হয়েছে। এখানে যেসব বন্যপ্রানীদের আনা হবে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ কতটা সুরক্ষিত তার মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়ছে। উল্লেখ করা হয়েছে, ওদের খাদ্যশৃঙ্খল কতটা সুরক্ষিত। বন সংলগ্ন বনবস্তির মানুষের উপর এর ভালোমন্দ প্রভাব কী পড়বে তার উল্লেখ। জলের ব্যবস্থা কতটা ওদের জন্য সহায়ক সেইসব উল্লেখ করা হয়েছে এইসব মানচিত্রে এবং মাস্টার প্ল্যানে। ভবিষ্যতে আরও বন্যপ্রানীদের আনা হলে তাদের সুরক্ষা কতটা মজবুত থাকবে সব উল্লেখ রয়েছে এই মাস্টার প্ল্যানে।
তিনি জানান, এই মাস্টার প্ল্যান ও মানচিত্রগুলি প্রথমে পাঠানো হবে রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপালের কাছে। তিনি পরীক্ষার পর স্বাক্ষর করবেন। এরপর সেই মাস্টার প্ল্যান ও মানচিত্র চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে সেন্ট্রাল জু অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার কাছে। সেখান থেকে অনুমোদন আসার পর পুরোদমে কাজ শুরু হয়ে যাবে।
জানা গিয়েছে, এখানে প্রাথমিক কিছু কাজ করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে পশু হাসপাতাল। তৈরি করা হয়েছে পোস্টমার্টাম রুম। আর এসব করা হয়েছিল জলদাপাড়ার তৎকালীন বনাধিকারিক ভাস্কর জেভির সময়। বর্তমানে তিনি উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল। এখানে রয়েছেন বন্যপ্রানীদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অভিজ্ঞ বনকর্মী পার্থ সিনহা ও প্রাণী চিকিৎসক উৎপল শর্মা। গোটা পরিকল্পনাটি তিনি ৭ মার্চের মধ্যেই কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। আশা করছেন এই বছরের মধ্যেই দক্ষিণ খয়েরবাড়ির মিনি চিড়িয়াখানার কাজ শেষ করতে পারবেন। পর্যটন মানচিত্রে আরও একটি নতুন মাইলস্টোন হতে চলেছে দক্ষিণ খয়েরবাড়ি।
দক্ষিণ খয়েরবাড়ির এই মিনি চিড়িয়াখানায় থাকবে গণ্ডর, বাইসন, লেপার্ড, বাঘ, বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, ভাল্লুক, রেড পান্ডা, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। থাকবে লেপার্ড সাফারি। বেঙ্গল সাফারির আদলে তৈরি হচ্ছে এই মিনি চিড়িয়াখানাটি। জলদাপাড়া ঘুরতে এসে পর্যটকদের কাছে এই চিড়িয়াখানা আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে। এখানকার আর্থ সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ খয়েরবাড়ি যৌথ বন পরিচালন কমিটির সভাপতি কাজি রতন বলেন, ‘আমরা সেদিনের অপেক্ষায় রয়েছি। বহুদিন ধরেই শুনছি শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। কিন্ত হচ্ছে না বলে হতাশায় ভুগছি আমরা। এখানকার পরিকাঠামো যতটুকু বেঁচে আছে সেটাও ধ্বংস ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।‘