মাটিগাড়া: কিশোরীকে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার মাটিগাড়ায় দফায় দফায় চলল বিক্ষোভ, পথ অবরোধে শামিল হলেন চা শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার হিন্দু সংগঠনের ডাকা ১২ ঘণ্টা বনধের প্রভাব পড়ে মাটিগাড়ায়। বেলা বাড়তে শুরু হয় বিক্ষোভ। একাধিক জায়গায় পথ অবরোধ করা হয়। সোমবার পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ছাত্রীর খুনের অভিযোগের পর অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিকে ঘটনার পর থেকেই উত্তপ্ত রয়েছে এলাকা।
এদিন হিন্দু সংগঠন শিলিগুড়িতে ১২ ঘণ্টা বনধের ডাক দেয়। যার সমর্থনে নিশ্চিন্তপুর চা বাগানের শ্রমিকরা বাগান বন্ধ রেখে পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মিছিল শুরু করেন। এরপর মাটিগাড়া থানার পুলিশ মিছিল আটকাতে গেলে পুলিশকে উপেক্ষা করে মিছিল এগোতে থাকে খাপরাইল মোড়ের দিকে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলে নামানো হয় র্যাফ। উপস্থিত হন শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কামিশনার (ডিসিপি) অভিষেক গুপ্তা। পরে পুলিশ ও র্যাফ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রসঙ্গত, সোমবার শিলিগুড়ি সংলগ্ন মাটিগাড়ার পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে এক স্কুল ছাত্রীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। মেয়েটির পরনে ছিল স্কুলের পোশাক। ওই কিশোরীকে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। জানা গিয়েছে, দার্জিলিং মোড় সংলগ্ন একটি নেপালি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়া ছিল কিশোরী। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানান, সোমবার সাড়ে তিনটে নাগাদ এলাকারই এক পড়ুয়া স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে চিৎকারের শব্দ পায়। বাড়ি এসে বিষয়টি সে পরিবারের লোকেদের জানায়। এলাকার লোকজন মিলে পরিত্যক্ত বাড়িটিতে গিয়ে দেখতে পান, মাটিতে পড়ে রয়েছে ওই কিশোরীর রক্তাক্ত দেহ। তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় মাটিগাড়া থানায়। ঘটনাস্থলে আসেন এসিপি রাজেন ছেত্রী, ডিসিপি অভিষেক গুপ্তা এবং মাটিগাড়া থানার পুলিশকর্মীরা। দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওইদিনই গভীর রাতে শিলিগুড়ি পুলিশের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। রাতেই তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। তবে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওই কিশোরীর সহপাঠী ছিল না। তবে আগে থেকেই তাদের মধ্যে পরিচয় থাকতে পারে বলে অনুমান তদন্তকারীদের। এদিকে অভিযুক্তকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে, এই দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে শিলিগুড়ি আদালতে আন্দোলনে শামিল হন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা। বিকেলে যখন অভিযুক্তকে আদালত থেকে বের করা হচ্ছিল, সেই সময় তার ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে পুলিশ কর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়। তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়েন বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পালটা লাঠিচার্জ করে। ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় শিলিগুড়ির কোর্টমোড়ে। এরপর রাতে পালপাড়ার লেলিন কলোনি এলাকায় অভিযুক্ত সহ আশেপাশের কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর, আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বজরং দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে। যদিও বজরং দলের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। এদিকে এই ঘটনায় অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবিতে এদিন ১২ ঘণ্টা শিলিগুড়ি বনধের ডাক দেয় হিন্দু সংগঠন।