সানি সরকার, মিরিক: মিরিক(Mirik) লেকের পাশে ছোট্ট চায়ের দোকানে সাদা কাগজে কালো কালিতে বড় হরফে লেখা ‘এখানে আইসক্রিম পাওয়া যায়’। পাহাড়ে এমন পোস্টার দেখে অবশ্য বিস্ময় জাগেনি। কেননা, লেকের পাশে বসে থাকা অনেক তরুণ-তরুণীর হাতে আইসক্রিম যেমন দেখা গিয়েছে, তেমনই চড়া রোদ ঠিকরে পড়ছিল জলে। তপ্ত পাহাড়ে ঘাম ঝরেছে পর্যটকদের। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, আশপাশের অনেক দোকানেই বিকোচ্ছে আইসক্রিম, ঠান্ডা পানীয়।
কলকাতা থেকে বেড়াতে আসা সুকান্ত মজুমদার ঠান্ডা পানীয় কিনতে কিনতে বললেন, ‘পাহাড়ে এমন পরিস্থিতি হতে পারে ধারণাই ছিল না। রাতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে শুধু।’ দার্জিলিংয়ের আবহাওয়া কেমন জানতে চাইলেন তিনি। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য বলছে, শৈলরানির এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪.৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। অর্থাৎ পাহাড়ের কোথাও তেমন স্বস্তি নেই।
পাহাড়ে যদি এমন পরিস্থিতি হয়, তবে সমতলে কেমন হতে পারে আবহাওয়া? বুধবার চড়া রোদে দিন কেটেছে সমতলেরও। সূর্যের প্রখর রোদে যখন বাড়ির বাইরে থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তখন তার সঙ্গে অস্বস্তি বাড়িয়েছে পশ্চিম ভারত থেকে আসা গরম হাওয়া। এমন পরিস্থিতিতে ‘ভয়’ বাড়িয়েছে আবহাওয়ার(Weather) পূর্বাভাস। আবহাওয়ার মতিগতি বিশ্লেষণ করে বুধবার আবহাওয়া দপ্তর যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে গৌড়বঙ্গের ক্ষেত্রে আগামী পাঁচদিন তাপপ্রবাহের কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বাকি পাঁচ জেলার ক্ষেত্রেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি অস্বস্তি বাড়বে বলা হয়েছে। ২৬ এপ্রিল দার্জিলিং কেন্দ্রের পাশাপাশি ভোট রয়েছে গৌড়বঙ্গের রায়গঞ্জ এবং বালুরঘাটে। ওইদিনই মালদায় রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনসভা। ফলে এমন আবহাওয়া চিন্তায় ফেলেছে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলিকে।
আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য বলছে, সাম্প্রতিককালে এপ্রিল মাসের এই সময়ের গরম এতটা অসহ্য হয়ে ওঠেনি। যেমন গত বছর ২০ থেকে ২৪ এপ্রিল শিলিগুড়ির গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১-৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সেখানে বুধবার এই শহরের তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৩৭.২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ডিগ্রি বেশি। শুধু তাই নয়, অনুভূতি দিয়েছে প্রায় ৪৩ ডিগ্রির।
শুধু উত্তরের অলিখিত রাজধানী শিলিগুড়িতে নয়, ঘাম ঝরেছে সমতলের সর্বত্রই। মালদা থেকে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার থেকে রায়গঞ্জ, প্রতিটি জায়গায় তাপমাত্রা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু হঠাৎ কেন এমন পরিস্থিতি? প্রথমত, ১৭ এপ্রিলের পর থেকে উত্তরবঙ্গে তেমন বৃষ্টি হয়নি। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এতটাই কম যে, তার জন্য আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে সরাসরি সূর্যের তাপ এসে পৌঁছাচ্ছে। তপ্ত হয়ে উঠছে ভূপৃষ্ঠও। এর মধ্যে অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলেছে পশ্চিম ভারত থেকে গরম হাওয়ার ‘অনুপ্রবেশ’।
ফলে আপাতত যে স্বস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, সেকথা বলছেন আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহাও। তাঁর বক্তব্য, ‘তাপমাত্রা বৃদ্ধির জেরে কোথাও কোথাও বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টির ফলে সেখানে বৃষ্টি হলেও, স্বস্তি থাকবে সাময়িক। সর্বত্র বৃষ্টির সম্ভাবনা আপাতত নেই। সর্বত্র বৃষ্টি না হলে গরম থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব নয়। বরং বলা যেতে পারে গরম আরও কয়েকদিন থাকবে।’