নয়াদিল্লি: অতিথি অভ্যাগতদের নানাবিধ দুর্মূল্য উপহার দিতে ভালোবাসেন মোদি। অতীতেও সে নজির একাধিকবার পাওয়া গেছে। দেশীয় পরিমণ্ডল হোক অথবা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিসর, প্রিয়জনদের হাতে বহুমূল্য উপহার তুলে দিতে কখনও কার্পণ্য করেননি প্রধানমন্ত্রী। আমেরিকা সফরেও তার অন্যথা হবে না, সেটাই প্রত্যাশিত। বুধবার ওয়াশিংটন ডিসি ‘হোয়াইট হাউস’-এ দেখা গেল তেমনই দৃশ্য। সস্ত্রীক মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের সঙ্গে এদিন সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সাক্ষাৎপর্বে বাইডেন দম্পতির হাতে ভারত থেকে নিয়ে আসা একাধিক বহুমূল্য উপহার তুলে দেন মোদি, যার মধ্যে স্থান পেল এক টুকরো বাংলাও। উপহারে, আতিশয্যে চোখ ধাঁধিয়েছে সাধারণ মানুষের।
ভারত থেকে কী কী উপহার পেলেন বাইডেন? বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, বাইডেনের জন্য বিশেষ উপহারে রাজস্থানি হস্তশিল্পে সমৃদ্ধ এক সুদৃশ্য নকশাকাটা চন্দনকাঠের বাক্স তুলে দেন মোদি। বাক্সে রয়েছে রুপোর গণেশ মূর্তি এবং ছোট্ট একটি রুপোর প্রদীপ। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে পাওয়া তথ্যে এই গণেশমূর্তি ও প্রদীপ বানিয়েছে কলকাতার এক রৌপ্যকার যাদের পরিবার পাঁচ পুরুষ ধরে রৌপ্য কারিগরির কাজে প্রসিদ্ধ ও খ্যাতনামা। এরই সঙ্গে সুদৃশ্য ওই চন্দনবাক্সের মধ্যে দেওয়া হয়েছে ‘দশ দান’ (কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় বৈখানস গৃহসূত্রম অনুযায়ী সহস্র পূর্ণ চন্দ্রদয়ের চিহ্ন স্বরূপ গো দান, ভূদান, তিলদান, হিরণ্যদান, অর্জ্যদান, ধান্যদান, বস্ত্রদান, মিষ্টান্ন দান, রৌপ্য এবং লবনদান) স্বরূপ ১০টি উপহার যার মধ্যে রয়েছে বাংলার হস্তশিল্পীদের নির্মিত ‘গো দান’ হিসেবে রূপোর নারকেল, ‘ভূ দান’-এ মাইসোর স্যাণ্ডেল বা চন্দন, তামিলনাড়ুর তিল দিয়ে ‘তিল দান’, ‘হিরণ্যদান’-এ রাজস্থানি স্বর্ণশিল্পে নির্মিত ২৪ ক্যারট সোনার ‘ওঁ’ মুদ্রা, ‘অর্জ্যদানে’ পঞ্জাব থেকে দেশি ঘি, ‘বস্ত্রদানে’ ঝাড়খণ্ডের তসর সিল্ক তথা ‘ধান্যদানে’ উত্তরাখণ্ডের চাল, ‘মিষ্টান্ন বা গুড় দানে’ মহারাষ্ট্রের গুড়, ‘রৌপ্যদানে’ রাজস্থান থেকে বিশেষ সিলভার কয়েন, সর্বোপরি লবন দানে গুজরাটের উচ্চমানের নুন বা লবন। বস্তুত, গত বছর ৮০ বছরে পা দিয়েছেন বাইডেন। কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় বৈখানস গৃহসূত্রম অনুযায়ী, যে ব্যক্তি ৮০ বছর এবং ৮ মাস আয়ুকাল সম্পূর্ণ করেছেন তিনি ‘সহস্র পূর্ণ চন্দ্রদয়ে’র সাক্ষী; জীবনের এই মাহেন্দ্রক্ষণে শাস্ত্রের ব্যাখ্যা অনুযায়ী তাঁকে ‘দশ দান’ দেওয়ার বিধান রয়েছে। বলা যায়, এ বিশেষ ‘দশ দানে’র মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জন্মদিনের উপহার দিলেন মোদি।
শুধু তা-ই নয়, বাইডেনকে মোদি দিয়েছেন এক দুর্লভ পুস্তকও। লণ্ডনের ‘ফেবার এন্ড ফেবার’ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত, স্বামী শ্রী পুরোহিত ও ডবলু বি ইয়েটস-র অনুবাদে ‘দ্য টেন প্রিন্সিপাল উপনিষদ’ বহু প্রাচীন বইটির প্রথম সংস্করণ। মোদির উপহার থেকে বাদ যাননি আমেরিকার ‘ফার্স্ট লেডি’ও। বাইডেন জায়া ড. জিল জো বাইডেনের জন্য মোদি উপহার দিয়েছেন সুদৃশ্য নকশাকাটা কাশ্মীরি ‘কার-ই-কলামদানি’ বাক্সে দাক্ষিণাত্য অঞ্চল থেকে উদ্ধার হওয়া বহুমূল্য ৭.৫ ক্যারটের ‘গ্রীণ ডায়মন্ড’ বা সবুজ হীরা যা গোটা বিশ্বে অত্যন্ত দুস্প্রাপ্য। মোদিকেও পালটা উপহার দিতে ভোলেননি বাইডেন দম্পতি। এক প্রাচীন হস্তনির্মিত বিরল মার্কিন পুস্তক ভাণ্ডার বা বুকগ্যালারি নরেন্দ্র মোদির হাতে তুলে দিয়েছেন বাইডেন। এরসঙ্গে একটি ভিনটেজ আমেরিকান ক্যামেরা, আমেরিকা ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি নিয়ে একটি বিশেষ সংকলন এবং নোবেলজয়ী মার্কিন কবি রবার্ট ফ্রস্টের লেখা ‘কালেকটেড পোয়েমস’-এর প্রথম সংস্করণ। হোয়াইট হাউসে গতকাল রাতে মোদি ও বাইডেনের নৈশভোজে তাঁদেরই পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন দুই দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত কুমার ডোভাল এবং জ্যাক সুলিভানও। নৈশভোজের পর হোয়াইট হাউসের করিডরে দুই রাষ্ট্রনেতা মোদি, বাইডেনকে দীর্ঘক্ষণ একান্ত আলাপচারিতায় দেখা যায়। তবে কী বিষয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে, তা এখনও প্রকাশ্যে আনেনি বিদেশ মন্ত্রক।