প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ রাজ্য সরকারের তরফে উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকদের ৫ ডেসিমেল জমির পাট্টা বিলির নেপথ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনলেন কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা অধীর চৌধুরী। রাজ্য তৃণমূল সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়ে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বারস্থ হতে চলেছেন বলেও জানিয়েছেন বহরমপুর সাংসদ।
মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ সংবাদকে দেওয়া বিশেষ প্রতিক্রিয়ায় অধীর চৌধুরী দাবি করেন, ‘পাহাড়ে চা শ্রমিকদের ৫ ডেসিমাল জমির পাট্টা আসলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাল। আসলে জমির পাট্টা বিলি করে দার্জিলিং তথা পাহাড়ের মানুষদের শরণার্থী হিসেবে প্রতিপন্ন করতে চান তিনি। এটা চরম অনৈতিক পদক্ষেপ। সাহায্যের নামে পাহাড়ের অগণিত অসহায় চা শ্রমিকদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।’ অধীরের দাবি, ‘এ নিয়ে খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখব, তাঁর হস্তক্ষেপ চাইব। প্রয়োজনে আসন্ন সংসদীয় অধিবেশনে বিষয়টি উত্থাপিত করব। পাহাড়ের মানুষদের সঙ্গে কোনও অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না।’
উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকদের বসবাসের জন্য ৫ ডেসিমাল জমির পাট্টা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। গত জুন মাসে মালবাজারে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘চা-বাগানের শ্রমিকদের জন্য আমরা ঘর বানিয়ে দেব।’ তিনি এও বলেন, এই এলাকার মানুষ ৩৪ বছরের বাম শাসন দেখেছেন। গত ১০ বছরে কেন্দ্রে বিজেপি শাসন দেখছেন। কিন্তু কাজ করেছে তৃণমূলই। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘চা-বাগান শ্রমিকদের আমরা চা-বাগানের পাট্টা দেব, কাজ শুরু হয়ে গেছে। সিপিএম-বিজেপি কিচ্ছু করেনি।’ সেই অনুযায়ী পাট্টা বিলির কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার।
কিন্তু এর পরেই শুরু হয় বিতর্ক। শুধু চা শ্রমিক নয়, চা বাগানের জমিতে বসবাসকারী অন্যান্য ‘বহিরাগতদের’ও জমির পাট্টা দেবে বলে দাবি করে রাজ্য সরকার। এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। এভাবে ‘জবরদখলকারীদের’ স্বীকৃতি দেওয়া হলে, চা বাগান চলবে কী করে সে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। তবে রাজ্য ভূমি দপ্তরের তরফে দাবি, কোনও ভাবেই যাতে পাট্টা দিতে গিয়ে বাগানের স্বাভাবিক কাজকর্মে সমস্যা না হয়, তা দেখতে হবে। কিন্তু সে কথায় ভুলতে নারাজ পাহাড় এবং তরাইয়ের চা শ্রমিক সংগঠনদের একটি বড় অংশ৷ এও অভিযোগ ওঠে, পাট্টার বিনিময়ে চা শ্রমিকদের শরণার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং প্রকারান্তরে তা নিয়ে রাজনীতি করা হবে৷ এই সূত্রে ৮ আগস্ট দার্জিলিং-র ২০টি চা বাগান ও শ্রমিক সংগঠনের তরফে গঠিত জয়েন্ট ফোরাম এই সরকারি প্রস্তাবনার তীব্র বিরোধিতা করে জানায় পাহাড়ি চা শ্রমিকদের ৫ ডেসিমল (প্রায় ২ কাঠা) জমি নয়, সার্বিক চা জমির অংশীদারি দিতে হবে৷ এ নিয়ে ফোরামের তরফে একটি প্রতিনিধি দল দার্জিলিং জেলাশাসক এস পুনমবলমের সঙ্গে দেখা করে গোর্খাদের যাবতীয় দাবিদাওয়া সহ একটি স্মারকলিপিও দেয়।
সম্প্রতি সেই আঁচ স্পর্শ করেছে দেশের রাজধানী দিল্লিকেও৷ বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার নয়াদিল্লিতে এই বিষয়ে আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারণের জন্য মুখোমুখি বৈঠকে বসে আটটি গোর্খা দল, যার নেতৃত্বে ছিল জিএসএসএস (গোর্খা সংযুক্ত সংঘর্ষ সমিতি)। সূত্রের দাবি, জি-২০ সম্মেলন শেষ হওয়া মাত্র, আগামী সপ্তাহে দিল্লির যন্তর মন্তরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ধরনায় বসবেন রাজধানী দিল্লির শতাধিক গোর্খা মানুষ৷ তাঁদের অভিযোগ উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকদের পাট্টা বিলি করবার আড়ালে তাদের ‘শরণার্থী’ হিসেবে দেখানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। প্রয়োজনে এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপও দাবি করতে পারেন রাজধানীর গোর্খা প্রতিনিধিরা। এবার পাহাড়ের মানুষের অধিকারের প্রশ্নে সেই একইসুরে সুর মেলালেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা, সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীও।