কোচবিহার: চলছে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা, মাঝে মাঝেই স্ত্রীর হুমকি বা কটাক্ষ সামলাতে হচ্ছে। তার মাঝেও কী করে এত ভালো খেলছেন মহম্মদ সামি? এই প্রশ্নে দেশজুড়ে ক্রিকেট অনুরাগীদের চর্চা চলছে। এর উত্তর কিন্তু কিছুটা জানা কোচবিহারের আইনজীবী নাজমুল আলম সরকারের। তাঁর কাছ থেকেই মাঠে ও মাঠের বাইরে ধীরস্থির থাকার ভরসা পাচ্ছেন ভারতীয় পেসার।
কী করে? সামির হয়ে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা লড়ছেন নাজমুল। তিনিই দেখছেন মামলার প্রভাব যাতে সামির ওপর না পড়ে। সামিকে এ জন্য মামলার কোনও খবরও দেওয়া হয় না। নাজমুলের মন্তব্য, ‘আমি সবসময়ই সামিকে বলি, মামলা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি দেশের জন্য খেলে যাও। মামলার বিষয়গুলি আমরা দেখে নিচ্ছি।’ নাজমুলের পরবর্তী উপলব্ধি, ‘সামির প্রচণ্ড মনের জোর। শুধু মেয়ের জন্য মাঝেমধ্যেই ওঁকে মন খারাপ করতে দেখা যায়।’ সামির মেয়ে থাকে স্ত্রীর কাছে।
কোচবিহার শহরের দেবীবাড়ির বাসিন্দা নাজমুল। রামভোলা হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র এখন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী। কী করে আপনার সঙ্গে সামির যোগাযোগ? উত্তর এল, ‘নয়াদিল্লির এক আইনজীবীর মাধ্যমে ২০১৮ সালে পরিচয় হয় সামির সঙ্গে। তখন থেকেই ওঁর আইনজীবী হিসেবে কাজ করছি।’
সিউড়িতে বড় হওয়া হাসিম জাহানের করা বধূ নির্যাতন সহ নানা মামলার পর একেবারেই ভেঙে পড়েছিলেন সামি। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়। নাজমুল ও আরেক আইনজীবী সেলিম রহমান সামির হয়ে আদালতে লড়ছেন। এখনও সেই মামলা চলছে। মামলা সংক্রান্ত ঝামেলার জেরে যাতে সামির পারফরমেন্সে প্রভাব না পড়ে, তার জন্য প্রথম থেকে দেখছেন কোচবিহারের ছেলে। তিনি বলেন, ‘১৯ সেপ্টেম্বর সামির সঙ্গে কথা হয়েছিল। বিশ্বকাপের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম। মামলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সামির যাতে দুশ্চিন্তা না হয় সেজন্য আমরা সবসময় মামলার বিষয়গুলি থেকে সামিকে দূরে রাখার চেষ্টা করি। খুব প্রয়োজন না হলে মামলার আপডেটও ওঁকে জানাই না।’
আইনজীবীর সঙ্গে কথা বললে, সামির ওপর চাপটা বোঝা যায়। কত ঘটনার কথা বলেছিলেন তিনি। প্রবল ইচ্ছে থাকলেও নিজের সন্তানকে দেখতে না পাওয়া। বাবার মৃত্যু। তাঁর ধর্ম নিয়ে কটূক্তি। বিশ্বকাপের প্রথমদিকে ম্যাচে জায়গা না পাওয়া। সেই প্রেক্ষাপটে তাঁকে মামলার খবর দেওয়া হয় না।
নাজমুল শোনাচ্ছিলেন, ‘২০১৮ সালে সামির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর থেকেই একের পর এক ঝড়ঝাপটা এসেছে সামির জীবনে। সামির বিরুদ্ধে হাসিম জাহানের করা মামলাটি এখনও চলছে। একটা একটা করে বাধা পেরিয়ে সামি এখন ভারতকে বিশ্বকাপ জয়ের দোড়গোড়ায় নিয়ে গিয়েছেন।’ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আলিপুর আদালতে হাজির হয়ে সামি জামিন পান। ২-৩ দিন লালবাজারেও যেতে হয়েছে। প্রতি মাসে স্ত্রীর জন্য ৫০ হাজার টাকা ও সন্তানের জন্য ৮০ হাজার টাকা খোরপোশ দিতে হয়। সামির প্রবল ইচ্ছে থাকলেও সন্তানের সঙ্গে তাঁকে দেখা করতে দেন না হাসিম। এমন অভিযোগ বারবারই করেছিলেন সামির আইনজীবী।