শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছে সেই কবেই। মাঝে অতিক্রান্ত হয়েছে তিন যুগেরও বেশি। বহু না বলা কথা হয়তো আর বলাই হয়নি কোনওদিন। কালের নিয়মে বিচ্ছেদও হয়েছে একে অপরের মধ্যে। তবে মনের ভেতর তোলপাড় করা শৈশব-তারুণ্যের নির্ভেজাল আত্মিক টানকে রোখে কার সাধ্য? ইচ্ছে থাকলে ফের এক সূত্রে গাঁথা পড়তে অসুবিধেই বা কী! সেটাই করে দেখালেন নাগরাকাটা হাইস্কুলের (Nagrakata high school) ১৯৮৪ সালের মাধ্যমিক (Madhyamik) ব্যাচের একদল সহপাঠী। নিখাদ বন্ধুত্বের অমোঘ আকর্ষণ যে কতটা দুর্নিবার, তা প্রমাণিত হল তাঁদের রবিবারের পুনর্মিলন উৎসবে। সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে ছিল অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ৮২ বছরের দিদিমণির সান্নিধ্য। আবেগঘন পরিস্থিতিতে সেসময় পড়ুয়া-শিক্ষিকা প্রত্যেকেরই চোখে জল।
এদিন নাগরাকাটার (Nagrakata) একটি বেসরকারি রিসর্টে একসঙ্গে জড়ো হয় ৪০ বছর আগে কারণে অকারণে খুনশুটিতে মেতে ওঠা সহপাঠীদের দলটি। ওই ব্যাচের ৩৩ জনের মধ্যে বেশিরভাগই উপস্থিত ছিলেন এদিন। স্মৃতিরোমন্থনের পর্বও শুরু হয়েছিল একেবারে স্কুলের ধাঁচেই। প্রথমেই গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত। এরপর প্রত্যেকে চলে আসেন সেসময়ে তাঁদের ভূগোল, বাংলা, ইতিহাস ও গানের শিক্ষিকা পুষ্প বসুর কাছে। দিদিমণিকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল সেখানে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে এক ঝলক দেখেই চিনে যান তিনি। সংবর্ধনা প্রদান করতেই দিদিমণির চোখের কোণে তখন জল। যা দেখে আবেগের বাঁধ ভাঙে তাঁর সোহাগের ছাত্রছাত্রীদেরও। পুষ্পদেবী বলেন, ‘কত বকেছি। মারও খেয়েছে। ওরা যে এভাবে আমাকে নিয়ে পুনর্মিলনে শামিল হবে তা কল্পনারও অতীত ছিল। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ওদের নিয়েই তো থাকতাম। শুধু ৮৪-র ব্যাচই নয়। আমার ৪০ বছরের শিক্ষিকা জীবনের সবার কথাই মনে আছে।’
এদিন হাজারো কাজের মাঝেও আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) থেকে এসেছিলেন রেলের আধিকারিক সজল গুহনিয়োগী। কোচবিহার থেকে আসেন সরকারি চাকরির কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়া সুব্রত বাগচী। শিলিগুড়ি থেকে আশিস দত্ত, নাগরাকাটার শুভাশিস দত্ত, দীপুল বড়ুয়া, তপন তালুকদার, সুলকাপাড়ার তোবারক হুসেনরা তো ছিলেনই। সংগীতা বসু, পম্পি ভট্টাচার্য, বুলু সরকারদের একে অপরকে দেখেই শুরু হয়ে যায় ছাত্রীবেলার গল্প। এর মাঝে লুকসানের রতন দত্ত ও সুলকাপাড়ার জগদীশ রায়ের মতো দুই প্রয়াত বন্ধুকে স্মরণ করতেও ভুলে যায়নি কেউ। এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয় দুই বন্ধুর স্মৃতিতে। পুরো অনুষ্ঠানটির অন্যতম উদ্যোক্তা শুভাশিস দত্ত বলেন, ‘জীবনের স্মরণীয় একটি দিন হয়ে থাকল। দিদিমণির সান্নিধ্য ছিল পরম পাওনা। এখন থেকে প্রতি বছরই আমরা একটি দিন এভাবে শুধু নিজেদের জন্যে রাখব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’