রাজু সাহা,কামাখ্যাগুড়ি: আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের ভাটিবাড়ির বাসিন্দা উপেন্দ্রনাথ দাস। তিনি আবার তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল কমিটির সহ সভাপতিও বটে। উপেন্দ্রনাথের নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। রয়েছে কৃষিজমি ও বাইক। এদিকে, ১০০ দিনের কাজে বকেয়া প্রাপকের তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। উপেন্দ্রনাথ একা নন, এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। ১০০ দিনের কাজের টাকা প্রাপকদের নাম প্রশাসনের তরফে প্রকাশ করতে না করতেই এমন অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে আলিপুরদুয়ার জেলাজুড়ে। সপ্তাহখানেক আগেই তো এই প্রাপকদের তালিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পথ অবরোধ করেছিলেন আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকেরই ভেলুরডাবরির জব কার্ডধারীরা।ওই তৃণমূল নেতা অবশ্য বলছেন, ‘কীভাবে আমার নাম ওই তালিকায় রয়েছে সেটা জানি না। তালিকা থেকে আমার নাম বাদ দেওয়ার ব্যাপারে লিখিত আবেদন সহায়তাকেন্দ্রে জমা দিয়েছি।’ কিন্তু তা নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ কমছে না।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, কেন্দ্র একশো দিনের যে টাকা আটকে রেখেছে, তা দিয়ে দেবে রাজ্য সরকার। উপভোক্তারা যাতে টাকা পান সেজন্য রবিবার থেকে তৃণমূল কংগ্রেস সহায়তাকেন্দ্র খুলেছে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে। কিন্তু অভিযোগ, অনেক প্রকৃত উপভোক্তার নাম সেই তালিকায় নেই। বদলে প্রভাবশালী, অবস্থাপন্ন লোকের নাম চলে এসেছে। অনেক জায়গায় তৃণমূল নেতাদের নামও রয়েছে তালিকায়।
উপেন্দ্রনাথের মতোই আরও দুটো উদাহরণ হল রানা ভদ্র ও তাঁর স্ত্রী কৈলাস বাছার। শামুকতলার বাসিন্দা এই দম্পতির দুটো বাড়ি রয়েছে। রানা পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁর একটা ট্রাকও রয়েছে, আবার ওই বকেয়া প্রাপকের তালিকায় নামও রয়েছে দুজনেরই। তাঁরাও অবশ্য স্বীকার করেছেন যে কোনওদিনই ১০০ দিনের কাজ করেননি। তাই তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হোক।
এ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন কুমারগ্রামের বিজেপি বিধায়ক মনোজকুমার ওরাওঁ। তিনি বলেন, ‘এরাজ্যে ১০০ দিনের কাজে যে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে সেটা আবার প্রমাণিত হল। যে তালিকা রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত হয়েছে সেখানে তৃণমূল নেতা, তৃণমূল নেতার অনুগামী, পঞ্চায়েত সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের লোকের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা পাইয়ে দেওয়া এবং তার থেকে কাটমানি আদায় করা ছাড়া আর কিছু নয়।’
যদিও বিধায়কের এই বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার-২ ব্লক সভাপতি পরিতোষ বর্মন। তাঁর কথায়, ‘যখনই মুখ্যমন্ত্রী ১০০ দিনের টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তখনই কেন্দ্রীয় সরকারের ১০০ দিনের পোর্টাল থেকে এরাজ্যের উপভোক্তাদের নামের তালিকা মুছে দেওয়া হয়েছে। যাতে ওই তালিকা কোনওভাবেই আমরা না পাই। তাতেই কিছু সমস্যা হয়েছে।’ যেসব নাম নিয়ে অভিযোগ উঠছে, সেগুলি বাদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনিও।