নকশালবাড়ি: হৃদরোগে ভুগছে নকশালবাড়ির ছাত্রী। চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন পরিবার। জানা গিয়েছে, হার্টের অসুখে বাড়িতেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে আছেন ২০ বছরের রুমা যাদব। কলেজেও যেতে পারছেন না সে। নকশালবাড়ি কলেজের বাংলা অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী রুমা। গত বছর নন্দ প্রসাদ বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৯৯ নম্বর পেয়ে নকশালবাড়ি কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। পড়াশোনা করে মায়ের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত খালবস্তির বাসিন্দা রুমা যাদব। খালবস্তিতে এক কাঠা জমিতে টিনের ছাবড়া দেওয়া একটি বেড়ার বাড়িতে থাকেন রুমা এবং তার মা চম্পা যাদব। সঙ্গে থাকেন রুমার ছোট ভাই বিনয় যাদব। বাবা নেই। অনেক দিন আগেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। নুন আনতে পান্থা ফুরোয় অবস্থা পরিবারের। তিনজনের পরিবারে বড় মেয়ে রুমা। তাই মেয়েকে কষ্ট করেও পড়াশোনা শেখাতে চাইছেন চম্পা। প্রতিদিন সকাল হলেই চম্পা তার ছোট ছেলে বিনয়কে নিয়ে রাজমিস্ত্রির কাজে বেরিয়ে পড়েন। বাড়িতে একাই শয্যাশায়ী অবস্থায় থাকেন রুমা। মা ছেলের রোজগাড়ে বাড়িতে উনুন জ্বলে। এমন পরিস্থিতিতে মেয়েই ছিল এক মাত্র ভরসা। কিন্তু মেয়ের পড়াশোনার মাঝপথেই ঘটে গেল অঘটন। কলেজে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে গিয়েই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় রুমার। তড়িঘড়ি পরীক্ষা না দিয়ে নকশালবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রুমাকে। এরপরই রেফার করা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানেই রুমার মা চম্পা যাদব জানতে পারেন রুমার হার্টের ভালভের সমস্যা রয়েছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে। মেডিকেল সেই ব্যবস্থা নেই। তাই মেয়েকে বাঁচানোর জন্য টাকা ঋণ করে কলকাতায় নিয়ে যান চম্পা। সেখানে চিকিৎসা বাবদ ছয় লক্ষের উপরে খরচ শুনে আবার ফেরত আসেন চম্পা। এখন বাড়িতেই শয্যাশয়ী অবস্থায় রয়েছে রুমা। এতোগুলি টাকা কোথায় পাবেন সেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মা ও মেয়ে। আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তারা।
রুমা বলেন, ‘আমি ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারি না। চিকিৎসকরা ফলমূল খেতে বলেছে। কিন্তু বাড়ির আর্থিক পরিস্থিতি ঠিক নেই যে ফলমূল কিনে খাব। ভাত খেলেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। মনে হচ্ছে প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি সুস্থ হয়ে পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের পাশে দাড়াতে চাই।‘ চম্পা যাদব বলেন, কলকাতার একটি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখিয়েছি। তারপরেও অপারেশনের জন্য আরও ছয় লক্ষ টাকা প্রয়োজন। আমরা দিনরাত কাজ করে ভিটেমাটি বিক্রি করেও এতোগুলি টাকা জোগার করতে পারব না। আমার মেয়ের প্রাণের ভিক্ষা চাইছি মানুষের কাছে।‘
এদিন নকশালবাড়ি কলেজের তরফে রুমা যাদবকে ৩০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন নকশালবাড়ি কলেজের শিক্ষক ও অশিক্ষককর্মীরা।