শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়িঃ রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরিচালনার জন্য রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (Governor CV Ananda Bose) কার্যত সমান্তরাল প্রশাসন তৈরি করে ফেললেন। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে সংযোগ তৈরির জন্য রাজ্যপালের নির্দেশে ইতিমধ্যেই ‘বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয় কমিটি’ তৈরি হয়েছে। ওই কমিটির সদস্য হিসাবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন করে নোডাল অফিসারও নিয়োগ করা হয়েছে। সেই নোডাল অফিসার সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাছাই করা কয়েকজন উপাচার্য ও আধিকারিকদের নিয়ে রাজ্যপাল সোমবার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের (North Bengal University) কলকাতা ক্যাম্প অফিসে বিশেষ বৈঠক করেন। আর তা নিয়েই শিক্ষা মহলে তোলপাড়।
শিক্ষা দপ্তরের কর্তারা বলছেন, রাজ্য সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে নোডাল অফিসারের কোনও পদ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয় কমিটিরও অস্তিত্ব নেই। তাহলে কোন আইনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নোডাল অফিসার নিয়োগ করল সেই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বপনকুমার রক্ষিত বললেন, ‘রাজ্যপালের নির্দেশেই আমরা নোডাল অফিসার নিযুক্ত করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় নানা সমস্যার কথা নোডাল অফিসার রাজ্যপালকে জানাবেন। রাজ্যপালের বার্তাও আমাদের দেবেন। রাজ্যপালের নির্দেশেই সমন্বয় কমিটিও তৈরি হয়েছে। এই কমিটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের মধ্যে সমন্বয় রাখবে।’ শিক্ষা দপ্তরের কর্তারা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মন্তব্যে নারাজ। এক শিক্ষা আধিকারিক বলেন, ‘নিয়ম ভেঙে অনেক কিছুই হচ্ছে। সেসব নিয়ে মুখ খুলে কারও কুনজরে পড়তে চাই না।’ ফোন করা হলেও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সাড়া দেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক অরুণিমা ভট্টাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নোডাল অফিসার করা হয়েছে। এদিনের বৈঠকে অরুণিমা ছাড়াও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলকাতা ক্যাম্প অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মানস এস উপস্থিত ছিলেন। অরুণিমার বক্তব্য, ‘নোডাল অফিসারদের একটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনলজির (ম্যাকাউট) উপাচার্য নোডাল অফিসারদের সমন্বয় রক্ষার কাজ করছেন। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলকাতা ক্যাম্প অফিসকেই বিভিন্ন বৈঠকের জন্য ব্যবহার করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য আচার্য পরামর্শ দিয়েছেন।’
বৈঠকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নোডাল অফিসাররা ছাড়াও ম্যাকাউট, উত্তরবঙ্গ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কাউন্সিলের সচিব দিগন্ত বিশ্বাসকে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের নোডাল অফিসার করা হয়েছে। বৈঠকে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য দীপক রায়ের কথায়, ‘উপাচার্যদের কাজের প্রচুর চাপ। ফলে নোডাল অফিসারদের বিশেষ দায়িত্ব থাকবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলি রাজ্যপালের গোচরে আনতে নোডাল অফিসারকে বলা হয়েছিল। সেইমতো এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। নোডাল অফিসাররা মূলত রাজ্যপাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমন্বয় রক্ষার কাজ করবেন।’
গোটা বিষয়টি নিয়ে অবশ্য ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে। কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দেবকুমার মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজ্যপাল যেভাবে সরাসরি নাক গলাচ্ছেন সেটাও তিনি পারেন না। কোনও আইনেই নোডাল অফিসার বা সমন্বয় কমিটি তৈরি করা যায় না।’ উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনায় রাজ্য সরকারি আইন অনুসারে আচার্য বা রাজ্যপাল যদি কোনও বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনও নির্দেশ বা বার্তা দেন সেটা রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাবে। একইভাবে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও রাজ্যপালকে কিছু জানালে তা শিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমেই জানাতে হবে।