জলপাইগুড়ি: পৌষ শেষ। শুরু হচ্ছে মাঘ মাস। আর মাঘ মানেই বিয়ের মরশুম। বিয়েতে কনের বাড়ি থেকে উপহার হিসেবে বাসনপত্র দেওয়া বংশপরম্পরায় রীতিতে পরিণত হয়েছে। অনেকেই বাড়িতে তিন-চার পুরুষ আগের জমানো কাঁসা-পিতলের বাসন পালিশ করিয়ে মেয়ের সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে পাঠান। বিয়ের মরশুম পড়তেই পুরোনো বাসনগুলি ঘষেমেজে নতুন রূপ দিচ্ছেন কাঁসারিরা। তাঁদের এখন নাওয়াখাওয়ার সময় নেই। কিন্তু বর্তমানে হাল ফ্যাশানের নতুন নতুন বাসন ছেড়ে পুরোনো কেন? আসলে কোয়ালিটি। কোয়ালিটির সঙ্গে আপসে নারাজ কনের মা-বাবা বা গোটা পরিবার। নতুন বাসন অতীতের কোয়ালিটির নয়। তাই পারিবারিক ঐতিহ্যের কিছুটা মেয়ের সঙ্গে শেয়ার করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য।
কয়েক দশক আগেও মেয়ের বিয়েতে ‘ষোলো দান’-এর প্রথা চালু ছিল। ষোলো দানের অন্যতম বাসনপত্র। মেয়ের নতুন সংসারে ব্যবহারে জন্য কাঁসা-পিতলের থালা-বাসন থেকে জলের জগ সবই উপহার হিসেবে পাঠিয়ে দেওয়া হত। এখন অবশ্য শহর বা শহরাঞ্চলে এ প্রথা সেভাবে নজরে পড়ে না। তবে প্রান্তিক বাংলার আনাচকানাচে এখনও সেই রীতি পুরুষানুক্রমিক মেনে চলে বহু পরিবার। এই পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখতে বর্তমানে মেয়ের বিয়ের পর প্রথম শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় কাঁসার থালা-বাটি-গ্লাস দেওয়া হয়। অনেক পরিবারে বাসিবিয়েতে মেয়ে-জামাইকে ওই বাসনে মধ্যাহ্নভোজ করানোর প্রথা রয়েছে।
এ ব্যাপারে মন্দিরা দে জানান, এখন তো আর কাঁসা-পিতলের মান আগের মতো নেই। আমার বিয়েতে মা-বাবার বিয়ের বাসন পালিশ করে দেওয়া হয়েছিল৷ আজও ওগুলি দেখলে কেমন যেন নস্টালজিক হয়ে পড়ি। মেয়ের বিয়েতে নতুন বাসনের সঙ্গে ওইগুলিও পালিশ করে দেওয়াই যেতে পারে৷ বিপ্লব দে-র গলায়ও একই সুর। তিনি জানান, মেয়ের বিয়েতে উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য এগুলি খুব যত্নে রেখেছি৷ বাসনগুলি ওর দাদু-দিদার আশীর্বাদ।
এ সম্পর্কে বছর সত্তরের কাঁসারি রবি কংস বণিক কাঁসার থালা পালিশ করতে করতে বলেন, ‘বিয়ের মাস পড়তেই এখন আগের থেকে কাজের চাপ বেড়ে গিয়েছে। কেননা, এখন মা-ঠাকুমার বিয়েতে পাওয়া কাঁসা-পিতলের বাসনকোসনগুলি মেয়েদের পালিশ করে দেওয়ার চল হয়েছে। এগুলি সেরা কোয়ালিটির। কেউ কি চায় মেয়ের বিয়েতে খারাপ কিছু উপহার দিতে? কথা বলতে বলতে তিনি তেঁতুলের সঙ্গে কিছু মিশ্রণ একত্র করে ফের কাঁসা-পিতলের বাসনগুলি ঘষায় মন দিলেন। আসলে মানুষের রুচি বদলের সঙ্গে সঙ্গে কাঁসারিদেরও কপাল খুলেছে বলে মনে করেন অনেকেই। বিষয়টি উড়িয়ে দেননি রবিবাবুও।