চাঁচলঃ দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসু (Netaji Subhash Chandra Bose)। দেশবাসীর কাছে আবেগের অপর নাম নেতাজি। কিন্তু মঙ্গলবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তীতে (Netaji Birth Anniversary) দিনভর লজ্জাজনক ঘটনার সাক্ষী থাকল চাঁচল। চাঁচলের ইতিহাসে প্রথমবার নেতাজি মোড়ে নেতাজির আবক্ষমূর্তিবিহীন (idol) জন্মজয়ন্তী পালন হল। আর সেই জন্মজয়ন্তী পালনেও থেকে গেল একাধিক বিতর্ক। যে ঘটনা মাথা হেট করেছে চাঁচলের। সামনে এনে দিয়েছে প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের চূড়ান্ত উদাসীনতা (administration is in controversy)।
চাঁচলের প্রাণকেন্দ্র নেতাজি মোড়। যে মোড়ের একদম মাঝখানে থাকত নেতাজির একটি আবক্ষ মূর্তি। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নেতাজি মোড়ের সৌন্দর্যায়নের উদ্যোগ নেয় মালদা জেলা পরিষদ। নেতাজির পুরোনো আবক্ষ মূর্তিটি সরিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয় শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের থাকা নেতাজির মূর্তির আদলে এখানে নেতাজির নতুন মূর্তি বসবে। তারপর সেই মূর্তি বসানো হলেও উন্মোচন হওয়ার আগেই শুরু হয় বিতর্ক। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নতুন মূর্তিটি বিকৃত এবং নিম্নমানের। সামাজিক মাধ্যমেও ঝড় উঠে মূর্তির গুণগত মান নিয়ে। তারপর চাপে পড়ে সেই মূর্তি সরিয়ে নেয় জেলা পরিষদ। এলাকাবাসীর আশা ছিল হয়ত নেতাজির জন্ম জয়ন্তীর আগে নতুন মূর্তি বসে যাবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই ব্যাপক ক্ষোভ ছড়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে। অনেকেই মাল্যদান করতে এসে ঘুরে যায়। এমনকি চাঁচলের বিভিন্ন স্কুল ফি বছর প্রভাতফেরী করে এসে নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান করে। ছাত্র-ছাত্রীরাও এসে ঘুরে যেতে থাকে। মানুষের ক্ষোভের আঁচ করতে পেরে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বিলম্বিত বোধোদয় হয় চাঁচল পঞ্চায়েতের। পঞ্চায়েতের গুটিকয়েক জনপ্রতিনিধি এসে যে বেদির উপর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন হবে সেই বেদি মালা দিয়ে সাজান। সেখানে নেতাজির একটি ছবি রেখে তাতে মাল্যদান করে জন্মজয়ন্তী পালন করেন তাঁরা।
কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরেই ঘটে বিপত্তি। স্থানীয় এক বাসিন্দা মহম্মদ তৌহিদ নূর হঠাৎই এসে যে মালাগুলো দিয়ে বেদি সাজানো হয়েছিল সেই মালা গুলো ছিঁড়ে দেন। আশে পাশে থাকা ট্রাফিক পুলিশের ফুলের টব ভেঙে দেন। তার অভিযোগ কেন নেতাজির এত অবমাননা হবে। যেখানে আবক্ষ মূর্তিই নেই সেই বেদিতে মালা দিয়ে কি লাভ। এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। পুলিশ এসে ওই ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যায় থানায়। তারপর এদিন বিকেলে প্রশাসন এবং জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলে নেতাজি মোড়ে অবস্থান বিক্ষোভ করে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।
স্থানীয় বাসিন্দা দীপক চ্যাটার্জির মতে, “এতদিন ধরে আবক্ষ মূর্তি নিয়ে টালবাহানা করছে। নেতাজি কে নিয়ে ছেলেখেলা করছে। আজকের দিন চাঁচলের কালো দিন।”
চাঁচল সিদ্ধেশ্বর ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক আসারারুল হকের বক্তব্য,” আমার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও আজ আসতে পারল না মালা দিতে। প্রশাসনের উদ্যোগ নিয়ে জন্মজয়ন্তীর আগে অবশ্যই নতুন আবক্ষমূর্তি বসানো উচিত ছিল। এটাকে সামাজিক অবক্ষয় বলব।”
জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি এটিএম রফিকুল হোসেনের সাফাই,”নতুন মূর্তি আগামী ১০ দিনের মধ্যে স্থাপন হবে।এর আগের মূর্তি নিয়ে যেহেতু একটু সমস্যা হয়েছিল তাই এক্ষেত্রে সময় লাগছে। আজকে যা ঘটল তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।”