শামুকতলা: প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সকলের। রোদের তাপে অন্য প্রাণীদের মতো পাখিরাও কাহিল। জলাশয় বা নালাগুলো শুকিয়ে প্রায় কাঠ। জলকষ্ট মেটাতে উদ্যোগী হয়েছেন উত্তর মহাকালগুড়ি গ্রামের কয়েকজন তরুণ। মাটির পাত্র উঁচু গাছের ডালে বেঁধে, তাতে জল (Water) ভরে দিতে দেখা গেল তাঁদের। পাখিরা ওই পাত্র থেকে জল খাচ্ছে। আবার শরীর ডুবিয়ে ক্ষণিকের স্বস্তি পেতে চাইছে। তরুণদের এমন ভূমিকায় খুশি সবাই।
ওই দলের সদস্য তথা সমাজকর্মী উদয়শংকর দেবনাথ। তিনি বলছিলেন, ‘গরমে আমাদেরই অবস্থা খারাপ। দু’দিন আগে একটি গাছের নীচে বসেছিলাম। তখন পাখিদের দেখে অনুভব করলাম, তাদেরও কষ্ট হয়। এরপর আমি কমল ঘোষ, হরিশংকর দেবনাথ, পর্ণা দেবনাথের সঙ্গে এই সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করি। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিই, গাছের উপর মাটির পাত্র বেঁধে তারমধ্যে জল ভরে দেব। অবোলাদের এভাবে তৃষ্ণা মেটাতে পারব, সেটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি ওই পাত্র থেকে জল খাচ্ছে।’
কীভাবে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হল? উদয়শংকর জানালেন, গ্রামের একটি বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিল। সেখানকার ফেলে দেওয়া দইয়ের ফাঁকা হাঁড়িগুলো জোগাড় করা হয় প্রথমে। তারপর পরিষ্কার করে হাঁড়ি দড়ি দিয়ে বেঁধে গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই পাত্রে জল ভরে দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত নজর রাখছেন তাঁরা। জল ফুরিয়ে গেলেই সেসব পুনরায় ভরে দিচ্ছেন। পাখিরা সেখান থেকে জল খাচ্ছে, স্নানও করছে।
দলের একমাত্র মহিলা সদস্য পর্ণা দেবনাথ। বললেন, ‘গরমে পাখিদের তৃষ্ণা মিটছে, সেটা খুব আনন্দের কথা। আমি বাকিদের সাহায্য করছি সাধ্যমতো।’ প্রকৃতিপ্রেমী জীবনকৃষ্ণ রায়ের কথায়, ‘আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে অনেককিছু পাই। অথচ পরিবর্তে প্রকৃতির ভালোমন্দের দিকে খেয়াল রাখি না। পরিবেশকে সুস্থ রাখতে ন্যূনতম প্রচেষ্টার খামতি থেকে যায়। অন্য প্রাণীদের কথা ভাবি না। পাখিদের জন্য উদয়শংকর দেবনাথের মতো তরুণদের ভাবনা প্রশংসনীয়। তাঁদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। সবাই যদি প্রকৃতি আর প্রাণীদের জন্য ভাবতে শুরু করত, তাহলে আমাদের চারপাশ আরও সুন্দর হয়ে উঠত।’
বক্সা ব্যাঘ্র-প্রকল্পের সাউথ রায়ডাক রেঞ্জের আধিকারিক দেবাশিস মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, ‘এই গরমকালে পশুপাখিদের খুব কষ্ট পেতে হয়। তবে ওই তরুণরা যেভাবে পাখিদের তৃষ্ণা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে, সেটা সত্যিই খুব ভালো উদ্যোগ। সবাই এগিয়ে আসুক, সেটাই চাই।’