ডালখোলাঃ সরকারি প্রাইমারি স্কুল গুলিতে এমন বহু পড়ুয়া রয়েছে যাদের কাছে জন্মদিন পালন বিলাসিতা মাত্র। সেই সব পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখে ও সরকারি স্কুলে পড়ুয়াদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে ডালখোলা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলের তরফে নিষ্ঠা সহকারে পালন করা হয় পড়ুয়াদের জন্মমাস। প্রতিমাসের নির্দিষ্ট দিনে কেক কেটে, পায়েস খাইয়ে পড়ুয়াদের বিশেষ দিন পালন করেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। সেই দিনটিতে মিড ডে মিলের মেনুতেও থাকে রকমারি খাওয়ার। স্কুলের এমন উদ্যোগে যেমন খুশি পড়ুয়ারা, তেমনই খুশি অবিভাবকমহল।
বেসরকারি স্কুলের দাপটে ক্রমশ কমছে সরকারী প্রাইমারি স্কুলগুলিতে ছাত্রসংখ্যা। কিন্তু উলটো ছবি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ডালখোলা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলে বর্তমানে ছাত্রসংখ্যা ২৩৫। ইতিমধ্যেই ডালখোলার এই বিদ্যালয়টি পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে স্বচ্ছ বিদ্যালয়, নির্মল বিদ্যালয়, শহরের সেরা বিদ্যালয় সহ একাধিক পুরস্কার পেয়েছে। এর পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের স্কুলমুখী করতে এক অভিনব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ডালখোলা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, স্কুলের প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর জন্মদিনের তালিকা তৈরি করে প্রতিমাসের নির্দিষ্ট দিনে জন্মমাস পালন করা হয়। এই স্কুলের শিক্ষিকা শিল্পী কুন্ডু জানান, “পুরো মাসে স্কুলের যে সকল পড়ুয়া ও শিক্ষক শিক্ষিকার জন্মদিন থাকে সে মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে একসাথে সকলের জন্মদিন স্কুলেই পালন করে থাকি আমরা।” অপর আরও এক শিক্ষক অমর রায় জানান, “জন্মমাস পালনে যা খরচ হয় তার পুরোটাই আমরা স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা মিলে বহন করে থাকি।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জীব কুমার বালার বক্তব্য, “আমাদের স্কুলে এমন অনেক বাচ্চা আছে যাদের বাড়িতে জন্মদিন পালন করাটা শুধু বিলাসিতা নয় কল্পনার অতীত। অনেকেরই ইচ্ছে থাকলেও উপায় হয়না জন্মদিন পালন করার। তাই আমরা বিগত বেশ কয়েক মাস থেকে প্রতি মাসে স্কুলেই একসাথে পড়ুয়া ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে জন্মমাস পালন করে আসছি। একটি পরিবারের মত একসাথে সকলকে মিষ্টিমুখ করিয়ে আমরা আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করি। এতে স্কুল ও পড়াশুনার প্রতি পড়ুয়াদের উৎসাহ বাড়ে।”
জানা গিয়েছে, যথেষ্টই নিষ্ঠা সহকারে স্কুল পড়ুয়াদের জন্মমাস পালন করা হয়। প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে স্কুল ছুটির পর স্কুলেই কেক কেটে সম্পুর্ন নিষ্ঠার সঙ্গে শঙ্খ ও উলুধ্বনী সহকারে ধান দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করে পায়েস খাইয়ে পালন করা হয় জন্মমাস। ওই দিনটিতে পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের মেনুতেও থাকে চমক। প্রতিটি খুদে পড়ুয়াদের পাতে পড়ে কেক, ভাত, ডাল, মাংস, পায়েস এবং শেষ পাতে বাদ যায়না মিষ্টিও।
স্কুলের এই উদ্যোগে খুশি অভিভাবকমহল। তাঁরা জানান, স্কুলে বাচ্চাদের জন্মদিন পালন করা একটা নতুনত্ব ব্যাপার। এর আগে এই ধরণের উদ্যোগ কোনও সরকারি স্কুলে করা হয় এমনটা আমরা আগে কখনও শুনিনি। বাচ্চারা এই দিনটির জন্য সারা মাস অপেক্ষা করে থাকে। পড়াশুনা ও খেলাধুলার পাশাপাশি স্কুলে এমন অনুষ্ঠান করার জন্য শিক্ষক শিক্ষকদের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়।