প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ২০ জুলাই থেকে শুরু হতে চলেছে সংসদের বাদল অধিবেশন৷ এই মুহূর্তে সে নিয়ে প্রস্তুতি তুঙ্গে সংসদীয় পরিসরে৷ ‘২৪-র সাধারণ নির্বাচনের আগে, অন্তিম বর্ষাকালীন অধিবেশনে একে অন্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণাতে যখন উদ্যত শাসক এবং বিরোধী উভয় পক্ষ, তখনই মঙ্গলবার লোকসভা সচিবালয় সূত্রে পাওয়া এক বিশেষ সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, গত চার বছরে ধুঁয়াধার পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন একঝাঁক নবাগত সাংসদেরা। সংসদীয় ময়দানে প্রথমবার ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ছুটিয়েছেন রানের ফোয়ারা, ঝকঝকে পারফরম্যান্সে নজর কেড়েছেন ২৫০ জন নতুন সাংসদ। এদের মধ্যে সেরা ‘পারফরম্যান্স’ দেখিয়েছেন কংগ্রেসের কুলদীপ রাই শর্মা, বিজেপির বালুরঘাট সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সহ এনসিপি’র অমল কোহলে, ডিএমকের ডি সেন্থিলকুমার, শিবসেনার সঞ্জয় মাণ্ডলিক-এর মতো সাংসদরা, দাবি সচিবালয় সূত্রে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, তালিকার প্রথমসারিতে অনুপস্থিত তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও সাংসদের নাম।
লোকসভা সচিবালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তদশ লোকসভায় সংসদে জায়গা করে নিয়েছিলেন ২৭০ জন নবাগত সাংসদ, যা সংসদীয় ইতিহাসে এক বিরল নজির। তাঁরা প্রত্যেকেই ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, বড়সড়ো ব্যবধানে জিতে সংসদে এসেছেন। তরুণ প্রজন্মের সংসদীয় প্রতিনিধিরাই এর সিংহভাগ দখলে রেখেছেন। ২০২৪-র আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে যখন কমবেশি সমস্ত জন প্রতিনিধিরাই নিজেদের ‘পারফরম্যান্স’ মূল্যায়ন করছেন, সেই মুহূর্তে সংসদীয় পরিসরে সওয়াল জবাব, প্রশ্নোত্তর, লিখিত-অলিখিত ও মৌখিকভাবে তথা প্রাইভেট মেম্বার্স বিল এনে বেনজির কৃতিত্ব রেখেছেন ২৭০ জনের মধ্যে এই ২৫০ জন নবাগত সাংসদ৷
সংসদীয় সূত্রে পাওয়া তথ্যে, ২৫০ জন নবাগত সাংসদ সার্বিকভাবে মোট ৪১, ১০৪ টি সওয়াল করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে, সংসদে প্রতিস্থাপন করেছেন ৬৮৫ টি প্রাইভেট মেম্বার্স বিল, ৩৭৭ নম্বর সংসদীয় বিধি মেনে ১,৯০৮ টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন সরকারের উদ্দেশে। আন্দামান নিকোবরের কংগ্রেস সাংসদ কুলদীপ রাই শর্মা সর্বাধিক ৮৬৪ টি জবাব তলব করে দখল করে নিয়েছেন শীর্ষ স্থান, দ্বিতীয় স্থানে বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার যিনি ৫৬১ টি প্রশ্ন উত্থাপিত করেছেন, তৃতীয় স্থানে মহারাষ্ট্র এনসিপি-র আইনজীবী-সাংসদ অমল কোহলে যিনি গত চার বছরে ৫৫৪ টি প্রশ্ন বা জবাব তলব করেছেন এবং ৭ টি প্রাইভেট মেম্বার্স বিল প্রতিস্থাপন করেছেন লোকসভায় যা এক নজিরবিহীন কৃতিত্ব বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
উল্লেখ্য, সপ্তদশ লোকসভার সূচনায় লোকসভা অধ্যক্ষ ওম বিড়লা একঝাঁক নবাগত সাংসদের আগমনে নিজের খুশি ব্যক্ত করে বলেছিলেন, এ এক অনন্য নজির। আগামীদিনে এই নবাগতরা সংসদীয় পরিসরে নিজ নিজ কৃতিত্বের পরিচয় রাখবেন, এ নিয়ে আশাবাদী ছিলেন তিনি। বলাই বাহুল্য তাঁর সেই প্রত্যাশা পূরণ করেছেন নবাগত সাংসদরা। ২৭০ জনের মধ্যে ২৫০ জন, অর্থাৎ প্রায় ৯০ শতাংশ ‘নবাগত’ সাংসদরা সংসদীয় পরিসরে যথেষ্ট সক্রিয় এবং সপ্রতিভ, লোকসভা সচিবালয় সূত্রে প্রকাশিত সমীক্ষায় তা প্রমাণিত হয়েছে৷ ‘নবাগত’দের এই কৃতিত্বে অত্যন্ত খুশি লোকসভা অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। সচিবালয় সূত্রে দাবি, সংসদের সেরা ‘নবাগত’ পারফর্মারদের শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়েছেন স্পিকার।