পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তপশিলি উপজাতির আসনে এবারের পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন একাধিক অ-আদিবাসী। এমন অভিযোগ তুলে জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে ইতিমধ্যেই বিক্ষোভ দেখিয়েছে একাধিক আদিবাসী সংগঠন। এমনকি তারা একটি তালিকাও তৈরি করেছেন। আদিবাসীরা একত্রিত হয়ে জেলাশাসকের কাছে সেই তালিকা সহ ডেপুটেশন জমা করেছেন।
শুক্রবার বিকেলে বালুরঘাটে জেলা প্রশাসনিক কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ সমিতি, দক্ষিণ দিনাজপুর আদিবাসী যৌথ মঞ্চ ও পশ্চিমবঙ্গ সানথাল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। তাঁদের অভিযোগ, এবার পঞ্চায়েত ভোটে প্রচুর সাধারণ মানুষকে আদিবাসী আসনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস, আরএসপি সকলেই আছে। সেইসব প্রার্থীদের নাম সহ একটি তালিকা তুলে ধরেছেন আদিবাসীরা। যেখানে মোট নয় জন প্রার্থীকে তাঁরা অ-আদিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে জেলা শাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন।
তাঁদের দাবি, তপশিলি উপজাতিভুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও সুবিধা লাভের আশায় প্রচুর মানুষ ভুয়ো শংসাপত্র তৈরি করছেন। তার ওপর নির্ভর করেই তাঁরা এবারের পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হিসেবেও দাঁড়িয়েছেন। যা একেবারেই উচিত হয়নি। এই নিয়ে আদিবাসী সংগঠন গুলি রীতিমতো ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে। আদিবাসীদের এই তালিকায় বালুরঘাটের হালদারপাড়া থেকে শুরু করে চিঙ্গিসপুর, দৌলতপুর, গাঙ্গুরিয়া, তপনের রামপাড়া চ্যাঁচড়া, হরিরামপুরের বাগিচাপুর সহ একাধিক গ্রামের নাম উঠে এসেছে। আসনগুলি তপশিলি উপজাতির জন্য বরাদ্দ ছিল। প্রায় সব রাজনৈতিক দলেরই প্রার্থী এই তালিকায় রয়েছেন। যদিও সব দলই সরকারি নিয়ম মেনেই প্রার্থী করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
দক্ষিণ দিনাজপুর আদিবাসী যৌথ মঞ্চের সভাপতি সুনীল বাঘোয়ারের অভিযোগ, ‘অ-আদিবাসীরা ভুয়ো তপশিলি উপজাতি শংসাপত্র বের করে চাকরি করছেন। কলেজে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। এরই মাঝে দেখছি এবার পঞ্চায়েত ভোটে কিছু সাধারণ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এসটি হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন। যার মধ্যে দাস, হালদার, সিং পদবী রয়েছে। তাছাড়াও, মাহাতো পদবীরা তপশিলি উপজাতি ভুক্ত নয়। তাঁরা কুড়মি বা বেদিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। সেই প্রতিবাদে আমরা জেলা শাসকের কাছে তাঁদের তালিকা সহ অভিযোগ জানিয়েছি।’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার বলেন, ‘আমাদের হালদার পদবী যুক্ত প্রার্থীর ক্ষেত্রে জানি তাঁর বাবার বাড়ি এসটি ও শ্বশুরবাড়ি এসসি। বাবার বাড়ির শংসাপত্রের স্বীকৃতি থাকবে। অন্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও সঠিক শংসাপত্র ও নিয়ম মেনেই প্রার্থী করা হয়েছে।’
বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরীর কথায়, ‘এই শংসাপত্র তো আমরা তৈরি করিনি। এসডিও, বিডিওরা দিচ্ছেন। ভুয়ো কিনা তাঁরা উত্তর দিতে পারবেন। আমরা শংসাপত্র দেখেই প্রার্থী করেছি। আমরা চাই না কোনও এসটি আসনে সাধারণ প্রার্থী দাঁড়াক।’
কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অঞ্জন চৌধুরীর মতে, ‘প্রথম দিকে রাজ্য সরকার অনেক মাহাতো পদবীর ব্যক্তিকে এসটি শংসাপত্র দিয়েছে। এখন তা সম্ভবত হচ্ছে না। তাই তাঁরা বৈধ শংসাপত্র দাখিল করেই প্রার্থী হয়েছেন।’ এবিষয়ে আরএসপির রাজ্য সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরী ও জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।