প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ২০২৪ এর আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হতেই কেন্দ্রীয় মহলে একটাই প্রশ্ন, তামাম গেরুয়া শিবির তথা বিজেপির মুখ অনিবার্যভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিরোধীদের মুখ কে? পাটনায় সদ্যসমাপ্ত বিরোধী দলীয় বৈঠক প্রসঙ্গে এই প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা এবং অন্যান্য শীর্ষ স্তরের নেতারা৷ এরই পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে বিরোধী শিবিরের দাবি, এই মুহূর্তে কোনও একটি নির্দিষ্ট মুখ বা কোনও একজন নির্দিষ্ট নেতা না থাকাটাই তাদের দলগত শক্তির উত্স, যা টিম স্পিরিটকে আরও জোরদার করেছে৷ সবাই একজোট হয়ে ২০২৪-র লক্ষে এগোলেই সাফল্য আসবে৷ তা না হলে যথাযথ নেতা ঠিক হওয়ার পরেও, মসনদ দখলের অভিপ্রায় অসম্পূর্ণই থেকে যাবে, মনে করছে বিরোধী শিবির৷
এই প্রসঙ্গে বিরোধীদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পাটনার বিরোধী বৈঠকে উপস্থিত অন্যতম বিরোধী প্রতিনিধি তথা সিপিআই(এমএল) নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘এহেন মুখের রাজনীতি আমদানি করেছে বিজেপি, বিরোধীরা নয়৷ সব ভোটেই ওঁরা প্রধানমন্ত্রীর মুখ দেখিয়ে লড়াই করে৷ গেরুয়া শিবিরের এই চেহারা সর্বস্ব এবং দেখনদারির রাজনীতি দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করছে, হিমাচল, কর্ণাটক তার প্রমাণ৷’ দীপঙ্কর বাবুর মতে, আসলে লড়াইটা হল ক্ষমতা বনাম জনতার৷ এই আবহে বিরোধীদের কাছে এখন মুখ নয়, বরং দলগত সংহতিই প্রাধান্য৷’ তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘লক্ষ্যের চেয়ে উপলক্ষ বড় করে তোলার মোটেই পক্ষপাতি নয় বিরোধী শিবির। দলগত সংহতিই সকলের কাছে মূল লক্ষ্য, নির্বাচনের পরেও নেতৃত্বের মুখ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা সম্ভব।’ অর্থাৎ কোনও নেতা নয়, ২০২৪-র লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে দলগত সংহতির উপরেই যে বিরোধী শিবিরের শীর্ষনেতারা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন, এবং তার বড় প্রমাণ মিলেছে শুক্রবারের পাটনার বৈঠকেই৷
প্রসঙ্গত, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রথমেই বলেছেন, ‘নো ভোট টু বিজেপি আগে এটা নিশ্চিত করতে হবে সবাইকে৷ বিজেপি বনাম বিরোধী লড়াই নয়, আসলে মোদী বনাম দেশের জনতা লড়াই হচ্ছে, মাথায় রাখুন৷ এই বৈঠকের পজিটিভ বিষয় গুলি নিয়েই এগোতে হবে৷’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথার সূত্র ধরেই দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে বলেন, ‘বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর সংকল্প করেছি আমরা, সকলে মিলে একজোট হয়েই এই সংকল্প পূরণ করবো আমরা৷’ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী স্পষ্ট ব্যাখা দিয়েছেন, একজোট হয়েই পথ চলবে বিরোধী শিবির৷ একই সুর শোনা গিয়েছে লালু প্রসাদ যাদব, সীতারাম ইয়েচুরি, নীতীশ কুমার, এমনকি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কথাতেও৷ বিরোধীরা দাবি করেছেন, বিজেপি যেটাকে দুর্বলতা বলে প্রচার করছে, সেটাই তাদের মূল শক্তি৷
এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে ‘আগে নেতা, পরে ক্ষমতা’- নীতিকে শিকেয় তুলে রেখে ২০২৪-এর মহারণে জয়কে পাখির চোখ করে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক কাজই করেছে বিরোধী শিবির৷ বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একের বিরুদ্ধে এক ফর্মুলা নিয়ে এগোতে চাইছে বিরোধীরা যেখানে যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী তাদের সেখানে গুরুত্ব প্রদানের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে৷ সারা দেশে লোকসভার ৫৪৩টি আসনের সব কটিতে যদি একের বিরুদ্ধে এক ফর্মুলা প্রয়োগ করা সম্ভব না হলেও, বেশির ভাগ আসনেও যদি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, তাহলেও দলগত সংহতির শক্তিতে বড় অ্যাডভান্টেজ পেতে পারে বিরোধী শিবির, সুনির্দিষ্ট কোনও বিরোধী নেতার মুখে আড়ালে লড়াই করার তত্ত্ব সে ক্ষেত্রে নিতান্তই ক্লিশে প্রমাণিত হতে বাধ্য, দাবি বিশেষজ্ঞ মহলের।