ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি: শনিবার দুপুরের অনিল বিশ্বাস ভবন। ঘরের ভেতরে চোখ রাখতেই মনে পড়ে গেল, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের সেই পরিচিত গান, ‘চিরদিন, কাহারো সমান নাহি যায়।’ যে দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অশোক ভট্টাচার্য বিগত কয়েক দশক ধরে ছিলেন শিলিগুড়িতে বামেদের মুখ, সেই অশোককে এদিন বসতে দেওয়া হল বাম-কংগ্রেস নেতাদের বসার জায়গার একেবারে এক কোনায়।
দার্জিলিং লোকসভা আসনটি এবার কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছে বামেরা। সম্প্রতি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ মুনীশ তামাংকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। সেই মুনীশকে নিয়ে এদিন শিলিগুড়িতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় অনিল বিশ্বাস ভবনে বাম নেতাদের সঙ্গে পরিচয় করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি শংকর মালাকার। শুধু শংকরই নয়, কংগ্রেসের জোটসঙ্গী হামরো পার্টির নেতা অজয় এডওয়ার্ডও এদিন উপস্থিত হয়েছিলেন অনিল বিশ্বাস ভবনে। প্রাথমিক পরিচয়পর্বের পর যৌথ সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করে বাম-কংগ্রেস। কিন্তু অবাক করার বিষয়, সেই সাংবাদিক বৈঠকে অশোকের বসার জায়গা হল একেবারে এক কোনায়। অথচ মধ্যমণি হয়ে থাকলেন সমন পাঠক, শংকর মালাকার, অজয় এডওয়ার্ড, প্রার্থী মুনীশ তামাং সহ জোটসঙ্গীরা। একেবারে কোনায় বসে জীবেশ সরকার, শংকর মালাকারদের বক্তব্য শুনতে দেখা গেল অশোককে।
বয়সের কারণে দলে সেভাবে আর কোনও পদে নেই তিনি। কিন্তু চেষ্টা করেন যতটা সম্ভব পার্টি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। বয়স হলেও নিয়মিত এখনও শহর ও গ্রামাঞ্চলে ভোটের প্রচারে বেরও হচ্ছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী। কিন্তু দলে আর সেভাবে গুরুত্ব পান না অশোক। শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়রকে এখনও দেখা যায়, অনেক সময় পার্টি অফিসে একাই বসে রয়েছেন। কারণ জেলা কমিটি কিংবা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় তাঁর অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। সেই কারণে কিছুক্ষণ একাই বসে থেকে বাড়ির পথে রওনা হন। যদিও ভোটের সময় নিজেই উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন অশোক। বিশেষ করে মহকুমার গ্রামাঞ্চলে তিনিই কিন্তু এখনও সিপিএমের মুখ।
কিন্তু সেই অশোক এখন দলেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন। যদিও মুখে সেকথা স্বীকার করছেন না প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। তাঁর কথায়, ‘আমি তো পার্টির একজন আমন্ত্রিত সদস্য মাত্র। দলের কোনও পদেই নেই। দলের মিটিংয়েও থাকি না। বয়স হয়ে গিয়েছে, তাই নিজেই সরে দাঁড়িয়েছি।’ বরং তাঁর মন্তব্য, ‘আমরা না সরলে নতুন মুখ উঠবে কী করে?’
নতুনদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছেন তিনি নিজে। আর অশোককে বসার জন্য ভালো জায়গা কি ছেড়ে দেওয়া যেত না? এব্যাপারে জানতে চেয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সমন পাঠককে টেলিফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি।