প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ টেবিলের এপারে-ওপারে মারমুখী দুই পক্ষ কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টি। মধ্যিখানে মাইক হাতে মধ্যস্থতায় খোদ তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লির অধ্যাদেশ বিতর্কে সমর্থন নিয়ে দুই বিবাদমান দলই শেষ পর্যন্ত মমতার নরম-গরম পরামর্শ মেনে নেয়, শান্ত হয় পরিস্থিতি। শুক্রবার এমনই বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকল পাটনার বিরোধী দলীয় বৈঠকের আসর।
বিরোধী দলীয় এক শীর্ষ নেতার দাবি, এদিন আরেকটু হলেই ঘটে যেত বড়সড় অঘটন। শুক্রবার মাঝপথেই ভেস্তে যেতে পারত পাটনার বিরোধী বৈঠক, যদি না ঠিক সময়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সূত্রের দাবি, শুক্রবার পাটনায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বাসভবনে বিরোধী শিবিরের বৈঠক চলাকালীন পরস্পর বিবাদে জড়িয়ে পড়ে আপ এবং কংগ্রেস শিবির৷ আপ সুপ্রিমো তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তাঁর দলবল সরাসরি চেপে ধরেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে এবং রাহুল গান্ধি সহ কংগ্রেস নেতৃত্বকে৷ কেজরির দাবি ছিল দিল্লি সরকারের ক্ষমতা খর্বকারী কেন্দ্রীয় অধ্যাদেশ নিয়ে বিরোধী বৈঠকে বসেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করুক কংগ্রেস৷ কিন্তু কংগ্রেসের তরফে জানানো হয় সময় এলে তাঁরা এই মর্মে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে৷ সূত্রের দাবি, তখনই ক্ষোভে ফেটে পড়েন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কেন কংগ্রেস এখনই তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে না, পাল্টা প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ এহেন অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে ভেস্তে যেতে বসা বৈঠককে সামাল দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
বিশ্বস্ত সূত্রে দাবি, মমতাই মাইক হাতে নিয়ে সবাইকে শান্ত করেন। কেজরিওয়ালকে আশ্বস্ত করেন দুশ্চিন্তার কিছু নেই, এই ইস্যুতে সকলেই তাঁর পাশে আছে এবং কংগ্রেসও যথা সময়ে তা নিয়ে মত দেবে৷ তিনিই কেজরিওয়ালকে থামান এবং বোঝানোর চেষ্টা করেন সময় এলে কংগ্রেস ঠিকই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে ভোট দেবে৷ পরিবেশ হালকা করতে মমতা প্রস্তাব দেন দিল্লি ফিরেই রাহুল গান্ধি, মল্লিকার্জুন খড়গে এবং অরবিন্দ কেজরিওয়াল একসঙ্গে চা-বিস্কুট সহযোগে এই বিষয়ে আলোচনা করে সমাধান সূত্র খুঁজে বার করুন৷ মমতার প্রস্তাবে সভার পরিবেশ হাল্কা হয়, সকলে হেসে ওঠেন৷ রাহুল গান্ধি নিজেও প্রস্তাবে সম্মতি প্রকাশ করে মমতাকে ধন্যবাদ জানান৷ ‘রেফারি’র ভূমিকায় মমতার ঠিক সময়ে হস্তক্ষেপে রক্ষা পায় বড়সড় বিপর্যয়, আবার মূলস্রোতে ফেরে বিরোধীদের আলোচনা৷
উল্লেখ্য, দিল্লি সরকারের ক্ষমতা খর্ব করে আনা মোদি সরকারের অধ্যাদেশকে ঘিরে কংগ্রেস-আপ চাপান উতোর চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই৷ এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে দিল্লি সরকারের অধীন আমলাদের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে মরীয়া মোদি সরকার৷ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে দিল্লির শাসক দল আম আদমি পার্টি৷ তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, জেডিইউ, সপা, আরজেডি, এনসিপি এবং বাম দলগুলিও৷ এর পরেও কংগ্রেস শিবিরের তরফে আপ-র ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান জানানো হয়নি৷ এমনকি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজে রাহুল গান্ধির সঙ্গে দেখা করে এই ইস্যুতে আলোচনার সময় চাইলেও তাকে সময় দেওয়া হয়নি৷ এই আবহে পাটনার বিরোধী বৈঠকে দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে আনা অধ্যাদেশ নিয়ে আলোচনা করা হোক এবং কংগ্রেস নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করুক, দাবি জানিয়েছিল আপ নেতৃত্ব৷