নাগরাকাটা: কমলালেবু গাছে সাইট্রাস ডাইব্যাক সহ নানা ধরনের মারণ রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে বহু গাছে বয়স বেশি হওয়ায় ফলন ও স্বাদ দুই-ই কমেছে। সেজন্য চায়ের পরই পাহাড়ের অন্যতম গরিমা হিসেবে পরিচিত কমলার পুরনো সুদিন ফিরিয়ে আনতে মিশন অরেঞ্জ কর্মসূচি নিতে চলেছে উদ্যান পালন দপ্তরের আওতাধীন ডিরেক্টরেট অফ সিঙ্কোনা অ্যান্ড আদার্স মেডিসিনাল প্ল্যান্টস। ওই বিভাগের নির্দেশক ডঃ স্যামুয়েল রাই বলেন, এজন্য পরিকল্পনা তৈরি করে এগোনো হচ্ছে। নানা ধাপে কাজটি হচ্ছে। আশা করছি চাষিদের বাগানে সেই সুস্বাদু কমলার ফলন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
ঠিক হচ্ছে মাস ছয়েক আগে শুরু হওয়া মিশন অরেঞ্জ বা স্থানীয় ভাষায় মিশন সুন্তালেতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রেই জানা গেছে, এজন্য হাতিয়ার করা হয়েছে সুস্থ চারার তৈরির বিষয়টিকে। নীরবে ওই কাজটি হচ্ছে সিকিম সীমান্তে কালিম্পং এর মনসং এর রমফুতে। সেখানে নেট হাউসের ভেতর ৪ লক্ষ চারা তৈরি করা হচ্ছে। তার আগে নাগপুর থেকে রংপুর লাইন রাফ লেমন রুট স্টক নামে এক বিশেষ প্রজাতির ১ লক্ষ চারা নিয়ে আসা হয়। সেগুলির সঙ্গে দার্জিলিং ম্যান্ডারিন প্রজাতির চারার গ্রাফটিং বা কলম করে ওই ৪ লক্ষ নয়া চারা তৈরি করা হবে। গ্রাফটিং এর কাজটি শুরু হবে ফেব্রুয়ারিতে। এর ফলে রোগমুক্ত চারা পাওয়া যাবে সংশ্লিষ্ট কর্তারা জানাচ্ছেন। গ্রাফটিং এর জন্য নাগপুর থেকে চারা নিয়ে আসার পাশাপাশি ১ কুইন্ট্যাল বীজও আনা হয়েছে। সেগুলিকেও চারা তৈরির জন্য কাজে কাজে লাগানো হচ্ছে। গ্রাফটিংকেই চারা তৈরির ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়ার ফলে ফলন দ্রুত মিলবে। গাছের দৈর্ঘ্য কম হওয়ার কারণে পরিণত হয়ে যাওয়া কমলা পাড়তেও সুবিধা হবে চাষিদের। সাধারণত কমলার বীজ থেকে গাছ পরিণত হয়ে ফল পেতে ৭ বছর সময় লাগে। সেটা ওই পদ্ধতিতে ৩ বছরের মধ্যেই মিলবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের আশা। চারা তৈরির জন্য রামফুকে বেছে নেওয়ার কারণ সেখানকার উষ্ণতা অপেক্ষাকৃত বেশি।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কমলাতে যে শুধু সাইট্রাস ডাইব্যাক নামে ছত্রাক ঘটিত গাছ শুকিয়ে যাওয়ার মতো একপ্রকার রোগই হয় তা নয়। এর বাইরে রয়েছে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসজাত রোগও। রয়েছে শেকড় পচে যাওয়া বা কান্ডতে ফুঁটো হয়ে যাওয়ার মত আরো নানা মারাত্মক সমস্যাও। প্রজেক্ট অরেঞ্জের উদ্দেশ্য সুস্থ সবল গাছ উপহার দিয়ে চাষির দুশ্চিন্তা দূর করা।
ওই প্রকল্পটি এখানেই থেমে থাকছে না। এর মাধ্যমে কমলা চাষের বিজ্ঞানসম্মত দিক নিয়ে প্রতিটি চাষিকে ধারাবাহিকভাবে সচেতন ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার কর্মসূচিও হাতে নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের দার্জিলিং ও কালিম্পং এই দুই জেলায় ঠিক কত সংখ্যক কমলা চাষি রয়েছে সেই সমীক্ষাও শুরু হয়েছে প্রজেক্ট অরেঞ্জে। এজন্য ১৫ পাতার একটি প্রশ্নমালা তৈরি করা হয়েছে। জিটিএ এলাকার প্রতিটি সংসদে ওই প্রশ্নমালা নিয়ে চাষিদের কাছে যাওয়া হচ্ছে। বিশদে সবকিছু জেনে নিচ্ছেন সমীক্ষকরা। ইতিমধ্যেই প্রজেক্ট অরেঞ্জের মাধ্যমে কমলা গাছের নানা রোগ ও প্রতিকারের উপায়ের ওপর একটি বুকলেট তৈরি করা হয়েছে। যা বেশ কয়েক মাস আগে উদ্যানপালন দপ্তরের দ্বায়িত্বে থাকা মন্ত্রী গোলাম রব্বানীর হাত দিয়ে প্রকাশিত হয়। বর্তমানে ওই বুকলেটটি ছাপার কাজ চলছে। এরপর চাষিদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।