গাজোল: দুর্গাপুজো শেষ। এরপর শুরু হবে কালীপুজোর আয়োজন। তবে এই দুই পুজোর মাঝখানে শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে মা তারার আরাধনায় মেতে ওঠে গাজোলবাসী। শুক্লা চতুর্দশী তিথিকে মা তারার আবির্ভাব তিথি হিসেবে মানা হয়। এই দিনে তারাপীঠে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। বিশেষভাবে পূজিতা হন মা তারা। সেই প্রথা মেনে গাজোলের তারাতলায় তারা মন্দিরেও হয় মায়ের আরাধনা। তিথি অনুযায়ী শুক্রবার রাতেই অনুষ্ঠিত হয়েছে তারা মায়ের বিশেষ পুজো।
তারা মায়ের আবির্ভাব তিথি সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায় তা অনেকটা এইরকম- বানিজ্য থেকে ফেরার সময় সওদাগর জয় দত্তর ছেলে সর্পাঘাতে মারা গিয়েছিলেন। তারাপীঠের জীবিত কুন্ডর জলের স্পর্শে প্রাণ ফিরে পায় সওদাগরের ছেলে। এরপর রাতে তারা মায়ের স্বপ্নাদেশ পান সওদাগর জয় দত্ত। স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরই তারাপীঠ মহাশ্মশানে থাকা মায়ের শিলা মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। অন্যমতে মহামুনি বশিষ্ঠ দেব সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে এদিন মা তারার দর্শন পান। তাই এই তিথিকেই তারা মায়ের আবির্ভাব তিথি হিসেবে ধরা হয়। এই দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ ছুটে আসে তারাপীঠে। এদিন তারা মায়ের বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা করা হয়।
তারাপীঠের নিয়ম অনুযায়ী গাজোল বিবেকানন্দ ক্লাব আয়োজিত তারা মায়ের পুজো এবার পা দিল ৩৮তম বর্ষে। গতকাল রাতে তান্ত্রিক মতে অনুষ্ঠিত হয়েছে মায়ের পুজো। পুজো কমিটির সভাপতি রণদা সরকার জানালেন, প্রতিবছর শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে মায়ের পুজোকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠে গোটা গাজোলের মানুষ। তবে শুধু গাজোল নয় বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ আসেন এই পুজোতে। পুজোকে কেন্দ্র করে প্রায় ১২-১৩ দিন ধরে চলে বিভিন্ন উৎসব এবং মেলা। নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে অনুষ্ঠিত হয় বামদেবের পুজো। তারপর হয় বজরংবলীর পুজো। সব শেষে ষোড়শপচারে তান্ত্রিক মতে অনুষ্ঠিত হয়েছে মায়ের পুজো। মায়ের ভোগে ফলমূল মিষ্টান্ন, অন্ন ভোগ, পোলাও, পাঁচ রকম ভাজা, শোল মাছ পোড়া ছাড়াও পুজো চলাকালীন পাঁঠা বলি দিয়ে সেই পাঁঠার মাংস রান্না করে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত মায়ের পুজো অনুষ্ঠিত হয়েছে। আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে মাকে নতুন বেনারসি, সোনার অলংকার দিয়ে রাজবেশে সাজানো হয়েছে।