মাদারিহাট: নির্মম পরিস্থিতি। দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম একমাত্র ছেলের চিকিৎসার জন্য নার্সিংহোমের বিল মেটাতে বাবা-মা নিজেদের শেষ সম্বল ভিটেমাটিটুকু বিক্রি করে দিলেন। বর্তমানে খোলা আকাশের নীচেই তঁাদের ঠাঁই। ফালাকাটা ব্লকের শালকুমার গ্রাম পঞ্চায়েতের ভৈরবহাট শিবনাথপুরের ঘটনা। ৫ ফেব্রুয়ারি বাইকের ধাক্কায় কিশোর কৌশিক আহমেদ গুরুতর জখম হয়। প্রথমে কোচবিহারের একটি নার্সিংহোমের পর বর্তমানে সে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি।
পরিবার সূত্রে খবর, ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কৌশিক তার এক বন্ধুর সঙ্গে সাইকেল নিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিল। এক বাইক আরোহী হঠাৎই বাইক নিয়ে তাদের সজোরে ধাক্কা দেয়। কৌশিকের মা করিমা বিবি বলেন, ‘আঘাত গুরুতর হওয়ায় ওকে প্রথমে কোচবিহারে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করি। নয়দিনে পাঁচ লক্ষ টাকা বিল হয়েছিল। ওই বাইকচালক সহ পাড়াপড়শির সাহায্যে ওই বিল মিটিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু চিকিৎসায় কোনও সাড়া মেলেনি। এরপর শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাই। সেখানে এখনও পর্যন্ত সাড়ে সাত লক্ষ টাকা বিল হয়েছে। ওই টাকা মিটিয়ে দিতে হবে বলে আমাদের ওপর সমানে চাপ দেওয়া হয়। সোমবার ওই টাকার বিল মেটানোর পর ছেলেকে আইসিইউ থেকে বের করা হয়েছে।’
তবে সমস্যা এখনই মিটছে না। ওই কিশোরের সুস্থ হতে আরও দুই মাস সময় লাগবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। কৌশিকের বাবা আমির হোসেন পেশায় কাঠমিস্ত্রি। জমিজমা কিছুই নেই। ছেলের চিকিৎসার স্বার্থে স্বামী–স্ত্রী মিলে নিজেদের শেষ সম্বল ভিটেমাটি সাড়ে চার লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেন। কোনওমতে আরও কিছু টাকা জোগাড় করে শিলিগুড়ির নার্সিংহোমের বিল মেটান। সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের ম্যানেজার জয়ন্ত দাস বললেন, ‘মোট বিল থেকে ৬০ হাজার টাকা কম নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, নার্সিংহোমের সঙ্গে থাকা লজে কম ভাড়ায় ওদের থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।’ কৌশিক অবশ্য এখনই নার্সিংহোমটি থেকে ছাড়া পাচ্ছে না। ছেলে যতদিন নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন থাকবে ততদিন রোজ গড়ে অন্তত পঁাচ হাজার টাকার ধাক্কা। সেই টাকা কী করে জোগাড় হবে তা আমির-করিমার জানা নেই।