শামুকতলা: হাতির ভয়ে ফেলা রাখা বিঘার পর বিঘা জমিতে মালটা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের এক ব্যবসায়ী। মালটা চাষ করে তিনি যেমন আয়ের মুখ দেখতে শুরু করেছেন, তেমনি অন্যদের বিকল্প চাষের পথ দেখাচ্ছেন ওই ব্যবসায়ী। ওই মালটা বাগানে গ্রামের লোকেরা কাজও পাচ্ছেন এখন। প্রতিদিন ৮-১০ জন কাজ করছেন সেখানে। ৬৫ বিঘা জমিতে প্রায় ৫০০০ মালটা গাছ রয়েছে। গাছগুলি ফলের ভারে নুইয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় স্বাদে এবং মানে অতুলনীয় ফলগুলি। যেমন রসালো তেমনি মিষ্টি। আদিবাসীদের পতিত জমি লিজ নিয়ে মালটা চাষ করে পার্থ দাস নামে ওই ব্যবসায়ী রীতিমতো নজর কেড়েছেন।
আলিপুরদুয়ার দুই ব্লকের তুরতুরি গ্রাম পঞ্চায়েতের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল ঘেঁষা দামসিবাদ গ্রামে হাতির হানার জন্য চাষাবাদ করতে পারেন না। জমি রেখে কেউ দিনমজুরি করেন, কেউ পরিযায়ী শ্রমিক। এবার সেই পতিত জমিতে মালটা চাষ করে যে সফল হওয়া যায় সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। অন্যান্য চাষের ক্ষেত্রে হাতি এলেও মালটা বাগানে এখনও পর্যন্ত হাতি আসেনি। না আসার আরেকটি কারণ রয়েছে। ওই বাগানের চারপাশে লেবু গাছ লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এছাড়া ব্যাটারি চালিত বিদ্যুতের তারের বেড়াও দিয়েছেন। এর ফলে হাতির নাগালের বাইরেই থাকছে তাঁর মালটা বাগান।
কিন্তু হঠাৎ কেন মালটা চাষের দিকে ঝুকলেন ওই ব্যবসায়ী? তার উত্তরে পার্থবাবু বলেন, ‘লকডাউনের সময় ঘরে বসেই দিন কাটছিল। হঠাৎই মোবাইল ঘাটতে ঘাটতে সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ পড়ে নদিয়া জেলা লাগোয়া বাংলাদেশ মালটা চাষ করে প্রচুর চাষি লাভবান হচ্ছেন। তা দেখে আগ্রহ হয়। এরপরে তিনবার বাংলাদেশে গিয়ে ওখানকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলি এবং তাদের বাগান ঘুরে দেখি। সেখানে যদি মালটা চাষ হতে পারে তাহলে আমাদের এখানে কেন হবে না! বিভিন্ন কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে উৎসাহ পাই। এরপর এই বাংলাদেশ থেকে চারা এনে আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের দামসিবাদ এলাকার পতিত জমি লিজ নিয়ে ৬৫ বিঘা জমিতে ৫০০০ মালটা গাছ লাগাই ২০২১ সালে। প্রচুর যত্ন এবং প্রয়োজনীয় সার এবং কীটনাশক দিয়ে গাছগুলিকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। গত বছর ফুল হলেও আমরা ফলন পাইনি। এবছর ভালো ফলন পাচ্ছি। প্রতিটি গাছে প্রচুর ফল এসেছে। আশা করা যাচ্ছে আমরা লাভের দিকে এগোচ্ছি। অন্যান্য চাষিরাও মালটা চাষে উৎসাহিত হোক সেটাই চাই।‘
ওই বাগান দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন সঞ্জয় সরকার। তিনি জানান, ফলন ভালো হচ্ছে সেটাতে আমরা খুশি। কিন্তু বাজারে নাগপুরের যে মালটা বিক্রি হয়। তার থেকে গুণে মানে আমাদের ফল অনেক বেশি সুস্বাদু এবং রসালো। কিন্তু বাজারে বিক্রি করতে গেলে আমাদের ফল সেই সম্মান পায় না। লোকাল বলে দাম কম দিতে চায় আরতদাররা। এই ভাবনা দূর হওয়া দরকার।
শামুকতলা থানার ওসি অভিষেক ভট্টাচার্য জানান, এত সুন্দর মালটা চাষ এখানে হতে পারে সেটা ভাবতে পারিনি। আলিপুরদুয়ার ২ বিডিও চিরঞ্জিৎ সরকার জানান, দামসিবাদ গ্রামে মালটা চাষের বাগান তৈরি হয়েছে এবং সেখানে ফলন হচ্ছে ভালো সেটা শুনেছি। একদিন অবশ্যই সেই বাগান দেখতে যাব।