নৃসিংহপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়, বারবিশা: করোনাকালে পরীক্ষা ছাড়াই উচ্চমাধ্যমিকের মূল্যায়নে হতাশ হন বরাবরের ভালো ছাত্র পার্থপ্রতিম সাহা। মাধ্যমিকে ৮২ শতাংশের পর উচ্চমাধ্যমিকে ৬৩ শতাংশ নম্বরে রীতিমতো মুষড়ে পড়েছিলেন। তখন থেকেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণের তাগিদ মনে গেঁথে বসে। গুয়াহাটির আর্য বিদ্যাপীঠ মহাবিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ্যার সিক্সথ সিমেস্টারের এই পড়ুয়া লেখাপড়ার ফাঁকে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনলজি জয়েন্ট অ্যাডমিশন টেস্ট ফর মাস্টার্স (আইআইটি জ্যাম)-এর জন্য নিজেকে তৈরি করেছেন। গ্রুপ স্টাডি, সাম্প্রতিকতম সংস্করণের বই থেকে এফেক্টিভ স্টাডি এন্ড কোয়েসচন প্র্যাকটিস, পরীক্ষার মাস দেড়েক আগে থেকে দিনে ১২-১৩ ঘণ্টা পড়াশোনা তাঁর সফলতার মূলমন্ত্র। গোটা দেশে ভূতত্ত্ববিদ্যায় আইআইটি জ্যাম-এ বারবিশা শিক্ষকপল্লির এই তরুণের র্যাংক ৩৬। তাঁর ফলাফলে বাবা, মা, আত্মীয়স্বজনরা উচ্ছ্বসিত। গর্বিত শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে বারবিশার বাসিন্দারাও।
প্রবেশিকা পরীক্ষার রেজাল্ট বের হওয়ার পর গুয়াহাটি থেকে বারবিশার বাড়িতে চলে আসেন পার্থপ্রতিম। বিষয়টি জানাজানি হতেই পাড়াপড়শি থেকে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনা জানান। এখনও চলছে মিষ্টিমুখের পালা।
কৃতী জানালেন, সপ্তাহে ১ দিন অনলাইন কোচিং নিয়েছেন। ঘরে বসে পড়াশোনার সময়টা প্রথমে ৬-৭ ঘণ্টা, বাড়িয়েছেন পরের দিকে। তাঁর কথায়, ‘সর্বভারতীয় স্তরে ১০০-র মধ্যে র্যাংক পাব, প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু পঞ্চাশের মধ্যে নাম থাকবে, ভাবিনি। পিসতুতো দাদার পরামর্শ মেনে ভূতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছি। খড়্গপুর বা বম্বে আইআইটি থেকে মাস্টার্স করার ইচ্ছে। ভবিষ্যতে গেট (গ্র্যাজুয়েট অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট ইন ইঞ্জিনিয়ারিং)-এর মাধ্যমে ভূতত্ত্ব নিয়ে পিএইচডি করার পরিকল্পনাও রয়েছে।’ ভবিষ্যতে যাঁরা এই প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসবেন, তাঁদের জন্য পার্থপ্রতিমের পরামর্শ, ‘পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ, নিষ্ঠা এবং সফল হওয়ার তাগিদ থাকতে হবে।’
বাবা পেশায় দোকান ব্যবসায়ী উত্তম সাহা জানালেন, নীচু ক্লাসেও ছেলে ভালো রেজাল্ট করেছে। পড়াশোনার ব্যাপারে খুব একটা জোরাজুরি করতে হয়নি কখনও। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলার ব্যাপারে পার্থপ্রতিমের মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। এছাড়া ছেলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা তো রয়েছেই। আর মা অলকা সাহার কথায়, ‘আগামীতে উচ্চশিক্ষিত হয়ে গ্রামের নাম উজ্জ্বল করুক ছেলে। দেশের ও দশের হয়ে কাজ করুক এটাই চাইছি।’