কোচবিহার: শুক্রবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস। মহিলাদের জন্য একটা গোটা দিন ধার্য করেছে পৃথিবী। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে মেয়েদের অধিকার, দাবি নিয়ে আলোচনা সভা, অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু পার্বতী, রফিকাদের কাছে এই দিনটা সপ্তাহের বাকি পাঁচটা কাজের দিনের মতোই। কাজ না করলে টাকা মিলবে না। আর টাকা না থাকলে সংসারে উনুন জ্বলবে না। স্বামীর ওষুধের টাকা জুটবে না। সন্তানদের পড়াশোনা আটকে যাবে। তাই সংসার চালাতে কেউ বেছে নিয়েছেন রাজমিস্ত্রির কাজ। আবার কেউ ভ্যানরিকশা টানছেন।
কোচবিহারের টাকাগাছের দর্জিপাড়ার বাসিন্দা রফিকা খাতুন। স্বামী বিশেষভাবে সক্ষম, তিনি বাড়িতেই থাকেন। তাঁদের এক ছেলে, এক মেয়ে। দুজনে এখন পড়াশোনা করছে। ফলে গোটা পরিবারের দায়িত্ব রফিকার কাঁধে। তাই চার বছর ধরে রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন তিনি। এখন কোচবিহার স্টেডিয়ামের ভিতরে একটি রাস্তা তৈরির কাজে যুক্ত রয়েছেন। বৃহস্পতিবার সেখানেই কাজ করছিলেন রফিকা। নারী দিবস নিয়ে প্রশ্ন করতেই অবাক চোখে তাকালেন। পালটা প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘নারী দিবস আবার কী?’ তাঁদের নিয়ে বিশেষ দিন শুনে বললেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। কাজ না করলে খাব কী? অভাবের সংসার আমাদের। একদিন কাজ না করলে সেদিন কীভাবে হাঁড়ি চড়বে, সেই চিন্তায় থাকতে হয়। চার বছর ধরে এভাবেই কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।’
একইরকম গল্প শোনালেন পার্বতী সরকার। পার্বতীর বাড়ি কোচবিহার শহর সংলগ্ন বকুলতলা এলাকায়। স্বামী খোকন সরকার ও তিন মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। বড় মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। অন্য দুই মেয়ে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। খোকন আগে ভ্যানরিকশা করে গুড়িয়াহাটি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাড়ি বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহের কাজ করতেন। চোখের অসুখে দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি। সেইসময় সংসারের হাল ধরেন পার্বতী। এখন স্বামী-স্ত্রীতে মিলে বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের কাজ করেন। ভ্যানরিকশা টেনে পথ দেখান পার্বতী। পেছন থেকে ভ্যান ঠেলে তাঁকে শক্তি জোগান খোকন। দুজনে হাত ধরাধরি করে একসঙ্গে কাজ করছেন। পার্বতীর কথায়, ‘আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো অবস্থা। স্বামীর পক্ষে একা কাজ করা সম্ভব নয়। তাই আমি ভ্যানরিকশা নিয়ে কাজে নেমেছি। পরিবারের মুখে কিছুটা হলেও ভাত জোগাতে পারছি, এটাই অনেক।’
এঁদের মতো আরও কত নারী রোজ আড়ালে থেকে সংসারের জোয়াল টানছেন, সেসব কথা সামনে আসে না। রোজকার এই সংগ্রামের জীবনে তাই দিনটা নিয়ে আলাদা করে কোনও মাথাব্যথা নেই তাঁদের। তাঁদের চিন্তা, কী করে পরিবারকে আরেকটু ভালো রাখা যাবে, কীভাবে সংসারের অভাব মিটবে। শুক্রবার নারী দিবসেও তাঁরা যাবেন তাঁদের কাজের জায়গায়। তাঁদের জন্য বিশেষ দিনের পরোয়া করেন না তাঁরা। তাঁদের সমস্ত দিনই পরিবারের জন্য।