শিলিগুড়ি: চুরি করে ওই অপরাধ লুকোনোর জন্য দুষ্কৃতীদের ফন্দির শেষ নেই। তবে ওই ফন্দি যাই হোক, পুলিশের নজর থেকে এড়ানো সম্ভব নয়। শহর কিংবা বাইরে, যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন? পুলিশ ঠিক বের করেই নেবে। কিন্তু পুলিশ যখন ওই দুষ্কৃতীদের ধরতে রাত জেগে শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত দৌড়ে বেড়াচ্ছে, তখন থানাতেই চলছে তাণ্ডব! তাণ্ডব এমন চলছে যে সেটাকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বললে খুব একটা ভুল হবে না। শুনতে কিছুটা অবাক লাগলেও প্রতিদিন শহর শিলিগুড়ির বিভিন্ন থানায় গেলে এমনই লন্ডভন্ড ছবি নজরে পড়বে। অবাক ব্যাপার, অ্যান্টি ক্রাইম উইং-এর ঘরও বাদ যাচ্ছে না। তবে এর পিছনে কোনও ব্যক্তি কিংবা কোনও দাগি দুষ্কৃতী নয়, রয়েছে গণেশ বাবাজির ভক্ত ইঁদুর।
থানার কোনও ঘর খালি হলেই তারা বেরিয়ে পড়ছে স্বমহিমায়। তাদের টার্গেট থেকে বাদ যাচ্ছে না কম্পিউটারের তার থেকে শুরু করে ঠাকুরকে চড়ানো মিষ্টি। সম্প্রতি শিলিগুড়ি থানার অ্যান্টি ক্রাইম উইংস–এর ঘরে ঢুকতেই তছনছ কাণ্ড। সেখানে সাদা পোশাকের এক পুলিশ কম্পিউটার চালাতে গিয়ে দেখলেন, কিবোর্ডের তার কাটা। শুধুই কি কিবোর্ড, রাতে হেলমেট রেখে গিয়েছিলেন এক পুলিশকর্মী। ওই হেলমেটের স্পঞ্জও জায়গায় জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্য এক ইঁদুরকে পাকড়াও করতে পেরেছে পুলিশ। তবে এখনও ওই ঘরে রাত হতেই হানা দেওয়া আরও ইঁদুরের খোঁজে রয়েছে পুলিশ। তবে শুধু একটা বিক্ষিপ্ত ঘটনাই নয়, ভক্তিনগর থানা থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন ফাঁড়ি এলাকায় সকালে গেলেই ইঁদুরের দৌরাত্ম্যের বিভিন্ন প্রমাণ নজরে পড়বে। ভক্তিনগর থানার দ্বিতীয় তলায় আবার রেকর্ড রুম রয়েছে। সেখানে দুপুরে গেলেও গা ছমছম করে উঠতে পারে। মনে হতে পারে, কেউ অদৃশ্যভাবে যেন রেকর্ড রুমে থাকা কাগজগুলো নাড়িয়ে দেখছে। কিন্তু বাস্তবে এসব কিছুর মধ্যে ক্ষতি যে কতটা হচ্ছে, তা বোঝাই যেতে পারে।
শহরের এক ফাঁড়ির পুলিশকর্তা বলছিলেন, ‘ইঁদুরগুলোর মূল টার্গেটই থাকছে কম্পিউটারের তারগুলো। সকালে কোর্টে আসামিদের ফরওয়ার্ড সংক্রান্ত কাজ করতে এসে যখন দেখা যাচ্ছে যে কম্পিউটার চলছে না, কিবোর্ড চলছে না তখন সত্যি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কার্যত সব থানাতেই এক দুর্গতি।’ এই অবস্থায় খাঁচাবন্দি করা ছাড়া ইঁদুরের এই দৌরাত্ম্য বন্ধে আর কী পথ রয়েছে, সেই উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ির পুলিশকর্তারা। ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তায় খোদ পুলিশ কমিশনার সি সুধাকরও। তাঁর কথায়, ‘আমরা এব্যাপারগুলো দেখছি। মেইনটেনান্স সংক্রান্ত ব্যাপারে আমরা ডে বাই ডে নজরদারি রাখছি।’ সবমিলিয়ে, ইঁদুরের দৌরাত্ম্যে কাবু শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশ।