রামপ্রসাদ মোদক, রাজগঞ্জ: প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক পরিবারের ছেলে বিপুল রায় ইউটিউবে সিলভার বাটন পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বিপুলের বাড়ি রাজগঞ্জ ব্লকের কুকুরজান গ্রাম পঞ্চায়েতের কান্তিপাড়ায়। বিপুলের এমন সম্মান পাওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। কুকুরজান গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘মেধাবী ছেলে হিসেবেই এতদিন বিপুলকে গ্রামের মানুষজন জানত। কিন্তু পাড়ার ছেলে যে একজন দক্ষ ইউটিউবার (YouTuber) এই কথাটা অনেকেই জানতেন না।’
বিপুল জানান, সাধারণ কৃষক (Farmer) পরিবারে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেই তিনি বড় হয়েছেন। পড়াশোনা করেছেন কুকুরজান হাইস্কুল থেকে। ২০০৮ সালে মাধ্যমিক। দু’বছর পর উচ্চমাধ্যমিক এবং ২০১৩ সালে আনন্দ চন্দ্র কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স সহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ২০১৫ সালে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার ডিগ্রি এবং ২০১৮ সালে বিএড ডিগ্রি লাভ করেন। বাবা সুধীর বর্মনের পেশা কৃষিকাজ। ছোটবেলা থেকেই বাবার কাজে সহায়তা করতেন বিপুল। পড়াশোনা শেষ করেই সংসারে অর্থের জোগান দিতে শুরু করেন গৃহশিক্ষকতার কাজ।
দু’বছর পর তাঁর মনে হয়, কৃষিকাজ যেহেতু তাঁর জানা তাই তার উপর ভিত্তি করেই একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে দেখা যাক। ব্যাস যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ২০২১ সালে ‘বিপুল বর্মন বাংলা এক্সক্লুসিভ’ নাম দিয়ে শুরু করে দেন ইউটিউব চ্যানেল। টিউশন পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে যেটুকু সময় মেলে সেই সময়টুকু দিয়েই প্রথমদিকে ইউটিউবে দীর্ঘমেয়াদি ভিডিও বানানো শুরু করেন।
দীর্ঘমেয়াদি ভিডিওতে ভিউজ (Views) বিশেষ হচ্ছে না দেখে তিনি শর্ট ভিডিও বানানো শুরু করেন। তখন থেকেই তাঁর ভিউয়ার হুহু করে বাড়তে থাকে। তার সমস্ত শর্ট ভিডিও মূলত চাষবাস নিয়ে। বর্তমানে তাঁর বানানো ভিডিওগুলোতে কোটি কোটি ভিউজ হচ্ছে। বিপুলের দাবি, ‘আমার বেশিরভাগ দর্শক ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ থেকে। ১ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার অনেক আগেই হয়েছিল অবশেষে হাতে পেলাম সিলভার প্লে বাটন। গৃহশিক্ষকতার পাশাপাশি চ্যানেল থেকেও ভালোই উপার্জন হচ্ছে।’
ভাই অনিমেষ বর্মন বাবার সঙ্গে নিজেদের জমিতে শাক-সবজি চাষ করেন। আর সেই চাষবাস নিয়েই বর্তমানে নিয়মিত ভিডিও বানান তিনি। ভবিষ্যতে তাঁর চ্যানেলের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে ডিজিটাল মাধ্যমে কনটেন্ট বানাতে উৎসাহিত করবেন বলে বিপুল জানিয়েছেন।
ছেলে ইউটিউবে সিলভার বাটন পেয়েছে এই বিষয়টি বোঝেন না বাবা সুধীর বর্মন। তবে পাড়া-প্রতিবেশীদের মুখে শুনে ছেলের এই সাফল্যে খুশি হয়েছেন তিনি। সুধীর বলেন, ‘আগামীদিনে কী কাজ করলে ভালো হবে, সেটা ছেলের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছি।’