জ্যোতি সরকার,জলপাইগুড়ি: আর মাত্র একমাস পরেই লোকসভা ভোট। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই নেতাদের ভিড় বাড়ছে চা বাগানের শ্রমিক মহল্লাগুলিতে। সারা বছর কোনও খবর না নিলেও ভোটের মরশুমে তেনারা আসেন, বসেন, কথাও বলেন। যেন সেই ছকে বাঁধা ছবি। অথচ করলাভ্যালি থেকে শুরু করে ডেঙ্গুয়াঝাড়, রায়পুর, জয়পুর সহ প্রায় ১০টি চা বাগানে পানীয় জলের সুব্যবস্থা নেই। রাস্তা ঘাটেরও তথৈবচ অবস্থা। বহু বাগানে নেই চিকিৎসার সুব্যবস্থা। ভোটের আগে তাই শ্রমিকদের মুখে উঠে এল না পাওয়ার গ্লানি। করলাভ্যালি চা বাগানের বড় লাইনের তুর্কি মুন্ডা, টিন লাইনের বাপি কর্মকার, ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের শচীন মুন্ডা, রায়পুর চা বাগানের মিরু হেমব্রমরা নিজেদের ক্ষোভের কথা ব্যক্ত করেছেন।
ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের ১০ নম্বর লাইনের বাসিন্দা শচীনের কথায়, ‘আমাদের চা বাগান ভারত সেরা। সংবাদমাধ্যমে এই বাগান নিয়ে অনেক বড় বড় কথা লেখা হয়। অথচ বাগানে পানীয় জলের সমস্যার সমাধান এখনও হল না।’ তিনি জানান, ডেঙ্গুয়াঝাড় বাগানের পাশেই রায়পুর চা বাগান। সেখানে ঘরে ঘরে অপুষ্টিজনিত রোগ। শচীনের ক্ষোভ, ‘১৬ বছর ধরে আমাদের বন্ধু শ্রমিকরা সংগ্রাম করে চলেছেন। অথচ সে বাগান খোলার কোনও লক্ষণ নেই।’
ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের ফ্যাক্টরির দিকে এগোতেই ভাঙা লাইনের বাসিন্দা পীযূষ ওরাওঁ-এর সঙ্গে দেখা হল। শ্লেষ ভরা গলায় তিনি বললেন, ‘এখন নেতাদের দর্শন প্রতিদিন হচ্ছে। কিন্তু বর্ষা এবং শীতে আমরা যখন কষ্ট পাই তখন কোনও নেতার দেখা মেলে না। বোনাস দেওয়ার সময় নেতারা সদলে চাঁদা তুলতে আসেন। আহা!শ্রমিকরা কি শান্তিতে আছেন তা দেখে যান।’
রেলগেট পেড়িয়ে করলাভ্যালি চা বাগানের টিন লাইনের বাসিন্দা বাপি লোহার কর্মকারের সঙ্গে দেখা হল। তাঁর অভিযোগ, ‘সজল ধারার জল আমরা প্রায় পাঁচ মাস ধরে পাচ্ছি না। পানীয় জলের সুব্যবস্থা করবার জন্য কোনও উদ্যোগ আজ পর্যন্ত নেওয়া হল না।’ এই বাগানেরই বড় লাইনের বাসিন্দা তুর্কি মুন্ডা। চোখেমুখে বয়সের ছাপ স্পষ্ট। গালের চামড়া কুচকে গিয়েছে। তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাগানে বাগানে খোঁজ নিন, চা শ্রমিকরা সময় মতো পিএফ, গ্র্যাচুইটির টাকা পাচ্ছেন কি না। আমাদের বড়ই করুণ দশা। কার্যত আমরা অভিভাবকহীন। মুখে বলা হয় শ্রমিকদের ভোট বড়ই মূল্যবান। অথচ চা শ্রমিকরা একপ্রকার মূল্যহীনভাবে বেঁচে রয়েছেন।’