নাগরাকাটা: ওডিশি নৃত্যে জুনিয়ার ফেলোশিপ পেলেন জলপাইগুড়ির মেয়ে ডঃ পম্পি পাল। রাজ্য থেকে ওই নৃত্যের ওপর কেন্দ্রের সেন্টার ফর কালচারাল রিসোর্স অ্যান্ড ট্রেনিং (সিসিআরটি) প্রদত্ত ২০২১-২২ বর্ষের ফেলোশিপ প্রাপকদের মধ্যে পম্পির নামই রয়েছে। সংস্কৃতির অঙ্গনে অবদানের জন্য ফি বছর সিসিআরটি-র পক্ষ থেকে সংস্কৃতি নির্ভর গবেষণার কাজে ফেলোশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। এরজন্য আবেদনকারীদের দু তিনটি ধাপের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। জলপাইগুড়ি শহরের নিবেদিতা সরণীর পম্পির ধ্যানজ্ঞানই হল নাচ। কেন্দ্রের ফেলোশিপ পেয়ে এবারে তিনি ওডিশির সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার বালিনিস নৃত্যের যোগসূত্রের ওপর কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। ফেলোশিপের জন্য যে প্রজেক্ট তিনি জমা দিয়েছিলেন সেটারও বিষয়বস্তু ওডিশি-বালিনিস-এর তুলনামূলক আলোচনা। ফেলোশিপ-এর মাধ্যমে আগামী দু বছর ধরে তাঁর গবেষনা নির্ভর কাজটি চলবে।
পম্পি কথায়, ‘নাচকে লক্ষ্য করেও জীবনে এগোনো যেতে পারে। এই বার্তাটুকুই নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। সংস্কৃতি চর্চার প্রসারে আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।‘ শুধু ফেলোশিপ প্রাপ্তির মধ্যেই পম্পির কৃতিত্ব লুকিয়ে নেই। তিনি এর আগে বালিতে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন (আইসিসিআর)-এর হয়ে সেখানকার ভারতীয় কনস্যুলুটের আওতাধীন স্বামী বিবেকানন্দ কালচারাল সেন্টারে ২০১৯-২০২২-এর গোড়া পর্যন্ত নৃত্য শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করেছেন। সেখানে বালিনিজ নাচের সঙ্গে ওডিশি নাচের আঙ্গিকের বহু সাদৃশ্য তাঁর নজরে আসে। সংস্পর্শে আসেন ইন্দোনেশিয়ার প্রখ্যাত নৃত্য গবেষক পদ্মশ্রী ই বায়ান দিবিয়ার। ঐতিহ্যশালী ওডিশি নৃত্য যে অনেকটাই বালিনিজের দ্বারা প্রভাবিত এমনটাই মনে করেন ওই নৃত্য শিল্পী।
আধুনিক নাচের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা পম্পির জলপাইগুড়িতে কল্পদীপ নামে একটি নাচ শেখানোর একটি স্কুলও রয়েছে। সেখানেই প্রায় ৬০ জন ছেলেমেয়েকে তিনি তালিম দেন ওডিশির ওপর। একটি দল তৈরি করেছেন যাদের নিয়ে সুযোগ এলেই দেশের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়ান এখানকার কচিকাঁচাদের প্রতিভা প্রদর্শনে। পম্পির ছোটবেলার নাচের গুরু জলপাইগুড়ির নৃত্য দ্রোনাচার্য হিসেবে পরিচিত রুণু ভট্টাচার্য। এরপর শেখেন কলকাতার পৌষালী মুখোপাধ্যায়ের কাছে। পিএইচইডি করেছেন বর্তমানে বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধ্যাপিকা ডঃ স্মৃতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্বাবধানে। ২০২২-এর নভেম্বরে বালিতে আয়োজিত জি-২০ শীর্ষ সন্মেলনে যোগ দিতে যেবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেখানে গিয়েছিলেন সেইসময় ইন্দোনেশিয়ার ভারতীয় বংশদ্ভুতদের একটি অনুষ্ঠানের নৃত্য প্রদর্শনীতে কোরিওগ্রাফির জন্য তাঁকেই বেছে নেয় ভারতীয় কনস্যুলেট। এবছরের ৩০ ও ৩১ মার্চ তাঁর জলপাইগুড়ির দলকে নিয়ে অযোধ্যায় রামায়না কনক্লেভের আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির আসরের মঞ্চেও তাঁর প্রদর্শনী তাক লাগিয়ে দেয়।