শিলিগুড়ি: কোথাও ঝামেলা হলে সামাল দিতে হবে? পুলিশ কিংবা আবগারিকে হাতের মুঠোয় রাখতে হবে? টাকা দিলেই নাকি সব কাজ হয়ে যাবে। শিলিগুড়িতে বার এবং পাবের মালিকদের এমন অভয় দিচ্ছেন প্রধাননগরের ‘মজুমদারবাবু’।
কমিশনারেট থেকে শুরু করে আবগারি দপ্তর- সর্বত্রই অবাধ যাতায়াত তাঁর। সেই সুবাদেই দুই দপ্তরের আধিকারিকের একাংশের সঙ্গে পরিচিতি বানিয়ে ফেলেছেন। আর সেই পরিচিতির তাস সামনে রেখেই শহরজুড়ে বার, পাবের অবৈধ কার্যকলাপের মসীহা হয়ে উঠেছেন এই ব্যক্তি। অভিযোগ, আবগারি এবং পুলিশের নামে তোলাবাজিও করছেন দীর্ঘদিন ধরে। এরপর দুই দপ্তরের একাংশকে মোটা টাকা দিয়ে বার এবং পাবের অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার কারবারও চালাচ্ছেন।
সম্প্রতি সেবক রোডের একটি বারে আহত হন শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র পারিষদ কমল আগরওয়াল। সূত্রের খবর, সেই ঝামেলাও নাকি মিটিয়েছেন মজুমদারবাবু। পুলিশের নাম করে তোলাবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিল শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সদর) তন্ময় সরকারকে। তিনি বলছেন, ‘এখনও পর্যন্ত আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে এত থানা, সব জায়গা থেকে আমাকে খোঁজ করতে হবে। আমি খোঁজ করে দেখছি।’
শিলিগুড়ির প্রধাননগরের একটি নার্সিংহোমের কাছে ফ্ল্যাট রয়েছে মজুমদারের। প্রথমে মাটিগাড়ার একটি পাবের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই আবগারি এবং পুলিশের একটি অংশের সঙ্গে পরিচিতি তৈরি হয়। সেই থেকেই শহরের সমস্ত বার এবং পাব সামলানোর দায়িত্ব নিতে শুরু করেন তিনি। বারের মধ্যে ঝামেলা হলে সামাল দেওয়া, বার কিংবা পাবের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করা, বাড়তি সময় বার, পাব খোলা রাখার অনুমতি সবটাই একা হাতে সামলান তিনি।
প্রতি মাসে শহরের একাধিক বার থেকে মোটা টাকা তোলেন অভিযুক্ত। এরপর বিভিন্ন জায়গায় সেই ভাগ যায়। শুধু তাই নয় নতুন বার, পাবের লাইসেন্সও মেলে তাঁর হাত ধরে। তার জন্য দিতে হয় মোটা টাকা কমিশন। টাকা না দিলে নাকি আবগারি এবং পুলিশের তরফে অনুমতি মেলে না, এমনটাই দাবি করেন এই ব্যক্তি।
বছর দুয়েক ধরে এই কারবার চালিয়ে প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠেছেন মজুমদার। বছরে অন্তত দু’বার বিদেশ ভ্রমণ তার বাঁধাধরা। অভিযুক্তের এই কার্যকলাপে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশ এবং আবগারি দপ্তরের নীচুতলার একাংশ ব্যাপক ক্ষুব্ধ। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই ওপরমহলের আধিকারিকরা আটকে দেন বলে অভিযোগ। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অবাধে শহরে আবগারি এবং পুলিশের নামে তোলাবাজি করছেন তিনি।
মাটিগাড়ার একাধিক সিংগিং বারে এই মজুমদারের অভয়েই ডান্সিং বার চালানো হয় বলে অভিযোগ। এমন অনেক বার এবং পাব রয়েছে সেগুলির লাইসেন্স সংক্রান্ত সমস্যা থাকলেও আবগারি দপ্তরকে আড়ালে রেখে দিনের পর দিন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবটাই হচ্ছে মজুমদারের সৌজন্যে।