প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ ইজরায়েল বনাম প্যালেস্টাইনের রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধের আবহে একদিকে যেমন সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কড়া অবস্থান, অন্যদিকে রাখিবন্ধনের মাধ্যমে পি-২০ এর মঞ্চ থেকে বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের বার্তা একযোগে তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার দিল্লির যশভূমি কনভেনশন সেন্টারে দু’দিনের পি-২০ (জি-২০ স্পিকার্স কনফারেন্স) শিখর সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করতে গিয়ে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ দমনে বিশ্বের একাধিক দেশ সম্মত না হওয়ায় অসন্তোষ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মোদি। অন্যদিকে তেমনই চিরাচরিত প্রথার বাইরে হেঁটে পি-২০ এর মঞ্চেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে রাখি পড়িয়ে বিশ্বমৈত্রীর বার্তা দিয়েছেন মেক্সিকান সেনেটের প্রেসিডেন্ট আনা লিলিয়া রিভেরা। কৃতজ্ঞচিত্তে মোদি তাঁর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদও করেন৷
শুক্রবার সকাল ১১ টায় আনুষ্ঠানিক ভাবে পি-২০ অধিবেশনের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁকে কনভেনশন সেন্টারে স্বাগত জানান সপার্ষদ লোকসভা অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। এদিন আন্তর্জাতিক জি-২০ স্পিকার্স সামিটে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চলে আসে ইজরায়েল বনাম প্যালেস্টাইনের যুদ্ধের প্রসঙ্গ। যুদ্ধরত দুই দেশের নাম না করে ঘুরিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিন্দাও করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, ইজরায়েলের উপর হামাস জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলার সমালোচনা আগেই করেছিলেন মোদি। ইজরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর বার্তাও দিয়েছেন।
শুক্রবার পি-২০র মঞ্চে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বকেই একজোট হওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘এটা সকলের উন্নয়ন ও কল্যাণের সময়। বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে মানবকেন্দ্রিক চিন্তাধারায় এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের পৃথিবীকে এক পৃথিবী, এক পরিবার এবং এক আত্মার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে।’ তিনি এও বলেন, ‘ভারত কয়েক দশক ধরে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের মুখোমুখি হচ্ছে। এখানে সন্ত্রাসীবাদীরা হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। প্রায় ২০ বছর আগে আমাদের সংসদকেও সন্ত্রাসীরা টার্গেট করেছিল। সেই সময় সংসদ অধিবেশন চলছিল। সন্ত্রাসীরা সাংসদদের হত্যা করতে চেয়েছিল। এই ধরনের সন্ত্রাসী হামলার মোকাবিলা করে ভারত এখানে পৌঁছেছে।’
ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধের আবহে দাঁড়িয়ে মোদি জানিয়েছেন, ‘গোটা বিশ্ব বুঝতে পারছে সন্ত্রাসবাদ কত বড় চ্যালেঞ্জ! সন্ত্রাস যেখানেই ঘটুক না কেন, যে কারণেই ঘটুক না কেন, বা যেভাবেই ঘটুক না কেন, তা মানবতাবিরোধী। সন্ত্রাসের ব্যাপারে সবাইকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। এর আর একটি দিক রয়েছে, যার দিকে আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, এটা খুবই দুঃখজনক যে সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা নিয়ে বহুদেশে এখনও কোনও ঐকমত্য তৈরি হয়নি। এমনকি আজও, গোষ্ঠীকেন্দ্রীক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে ঐকমত্যের জন্য অপেক্ষা করছে। বিশ্বের এই মনোভাবের সুযোগ নিচ্ছে মানবতার শত্রুরা। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আমরা কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারি তা নিয়ে বিশ্বের সংসদ ও প্রতিনিধিদের ভাবতে হবে।’