প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বছর গড়ালেই নির্বাচন। তার আগে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট। পরিবর্তন বনাম প্রত্যাবর্তনের লড়াইয়ে নেমে একমুহূর্ত সময় নষ্ট করতে রাজি নন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার নয়াদিল্লির বুকে সরকারের শীর্ষস্তরের আমলাদের নিয়ে ১৫ আগস্ট রেড ফোর্ট রিভিউ বৈঠকে বসে দ্রুততার সঙ্গে যাবতীয় প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন মোদী, দাবি কেন্দ্রীয় সূত্রে। তাঁর মতে, ‘বিশ্রামের কোনও প্রশ্ন নেই৷ দ্রুততার সঙ্গে সব কাজ করতে হবে, জলদি হাত চালান…’
উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট দেশের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে চিরাচরিত কংগ্রেস সরকারের ব্যর্থতার তুলনায় গত দু দশকে কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের সাফল্যকাহিনি বেশি শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মুখে যার অনেকটা জুড়েই ছিল করোনা আবহে টিকাকরণে কেন্দ্রের ভূমিকা এবং অর্থনীতির সংস্কার। পাশাপাশি কোন প্রকল্পে কত ব্যয় করা হয়েছে, সেই হিসাবও তিনি দিয়েছেন জাতির উদ্দেশে ভাষণের সময়। মোদী বলেন, আগের সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় কেন্দ্র থেকে রাজ্যগুলিকে ৩০ লক্ষ কোটি পাঠানো হত। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা। পুরসভার বরাদ্দ ৭০ হাজার কোটি থেকে বেড়ে ৩ লক্ষ কোটি হয়েছে। কেন্দ্র কৃষকদের জন্য ইউরিয়া ভর্তুকিতে প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করছে। মুদ্রা যোজনার অধীনে আত্মনির্ভর কর্মসংস্থানের জন্য যুবসমাজের হাতে ২০ লক্ষ কোটিরও বেশি তুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৮ কোটি মানুষ ব্যবসা শুরু করেছেন। তাঁরা আবার অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
এরই সঙ্গে দেড় ঘন্টার ভাষণে লাল কেল্লা থেকে ‘বিশ্বকর্মা পুজো’ উপলক্ষে ‘বিশ্বকর্মা যোজনা’ চালু করার ঘোষণাও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেন্দ্র সরকার আগামী মাসে (সেপ্টেম্বর) বিশ্বকর্মা যোজনার আওতায় স্বর্ণকার, নাপিত, ধোপা, কুমোরদের মতো শ্রমিকদের ১৩ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার সাহায্য করবে। কেন্দ্র গত দশ বছরে ১৩.৫ কোটি অনগ্রসর মানুষকে দারিদ্রসীমার উপরে তুলে এনেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি দেশের গরীব, অনুন্নত তথা মধ্যবিত্তদের আবাস নির্মাণের জন্য সুলভে ঋণ দেওয়ার কথা, সোলার এনার্জিকে দেশবাসীর ব্যবহারের জন্য কাজে লাগানো, তথা ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারতের স্বপ্নে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার অমৃত উৎসবে আমরা ৫০ হাজার অমৃত সরোবরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। আজ ৭৫ হাজার অমৃত সরোবর তৈরির কাজ চলছে। ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়া, মেয়েদের জন্য টয়লেট করা। আমরা সময়ের আগেই লক্ষ্যে পৌঁছাচ্ছি। ২০০ কোটি টিকা দেওয়ার কাজ হয়েছে। ৬জি-এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।’ সূত্রের দাবি শনিবার সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সচিব পি কে মিশ্রা, ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা সহ শীর্ষ আমলা এবং আধিকারিকদের সঙ্গে লালকেল্লা ভাষণের রিভিউ বৈঠকে বসে এসব কাজই আরও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন মোদী৷
প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লায় জাতির উদেশ্যে দেওয়া তাঁর ভাষণে এও বলেছিলেন, সরকার দেশের ২ কোটি গ্রামীণ নারীকে কোটিপতি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে মহিলাদের ড্রোন চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ জন্য ‘লক্ষপতি দিদি’র পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নারী পাইলট রয়েছে। এদিন এই প্রকল্পেরও খোঁজ খবর নেন মোদী, দাবি কেন্দ্রীয় সূত্রে৷ তিনি এও বলেছিলেন, ‘আমরা যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছি সেগুলোও আমরা উদ্বোধন করব।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আমাদের এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে আমরা তা পূরণ করছি এবং তা পূরণ করে যাব। আমাদের সরকার দ্রুত কাজ করছে।’ এদিন সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়নে, নির্বাচনের আগে আরও দ্রুততা আনার জন্যই ‘রেড ফোর্ট’ রিভিউ বৈঠকে স্পষ্ট বার্তা দেন নরেন্দ্র মোদী, দাবি কেন্দ্রীয় সূত্রে।