উত্তরবঙ্গ ব্যুরো: উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে পঞ্চায়েতের পরে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া। বুধবার একাধিক পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এদিন জামালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হয়েছে। এই পঞ্চায়েতের প্রধান হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের গীতা বর্মন। উপপ্রধান হয়েছেন একই দলের গোপাল চন্দ্র রায়। উল্লেখ্য, মেখলিগঞ্জ ব্লকের আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। এবারের পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল বেরলে দেখা যায় পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় শাসকদল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়লাভ করে বিজেপি। একমাত্র জামালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলাফল এিশঙ্কু হয়। কুড়ি আসন বিশিষ্ট জামালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলাফলে শাসকদল পায় ১০টি আসন, বিজেপি পায় ৯টি আসন ও একটি আসনে জয়লাভ করে সিপিআইএম। কোনও দলই ম্যাজিক ফিগার না পাওয়ায় জামালদহে বোর্ড গঠন নিয়ে জমে ওঠে রাজনৈতিক খেলা। বোর্ড গঠনের আগেই জামালদহ ত্যাগ করে শাসকদল ও বিজেপির জয়ী সদস্যরা। দুই দলেই তাদের জয়ী সদস্যদের রিসর্ট পলিসি অবলম্বন করেছিল। এদিন বোর্ড গঠন নিয়ে পুলিশের তরফে বিরাট নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। গোপন ব্যালটে দুই দল ভোটে অংশগ্রহণ করে। সিপিআইএম-এর একজন জয়ী সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। ভোটে জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রধান হিসেবে মনোনীত হন গীতা বর্মন।
এদিন শান্তিপূর্ণভাবেই শীতলকুচি ব্লকের গোঁসাইরহাট, বড় কৈমারি ও খলিসামারি গ্রাম পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করল তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন গোঁসাইরহাট গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান হিসেবে শপথ নেন কনক বর্মন উপপ্রধান মমতা বর্মন। বড় কৈমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অঞ্জলি বর্মন ও উপপ্রধান সুশান্ত পাল। খলিসামারি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কল্পনা বর্মন ও উপপ্রধান দেলোয়ার হোসেন। বোর্ড গঠনের পরেই তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা আবির খেলায় মেতে ওঠেন।
চোপড়া ব্লকে এবার ভোট হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন ঘাসফুল শিবির। বুধবার প্রথম দফায় চোপড়া পঞ্চায়েত সমিতির তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে শান্তিপূর্ণভাবে তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড গঠন সম্পূর্ণ হল। এই তিন পঞ্চায়েতেই এদিন দলীয় প্যানেল মেনে প্রধান উপপ্রধান মনোনীত করা হয়। চোপড়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জিয়ারুল রহমান, উপপ্রধান পিংকি হালদার। দাসপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান মনসুর আলম, উপপ্রধান জিল্লুর রহমান। চুটিয়াখোর গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান মনেশ্বর মাঝি উপপ্রধান মহম্মদ সলেমান বোর্ড গঠন পর্ব শেষ হতেই এদিন সবুজ আবির খেলায় মেতে উঠেন দলীয় কর্মী সমর্থকরা। কোথাও আবার ডিজে বাজিয়ে কার্যত বিজয় মিছিল করা হয়।
মাথাভাঙ্গা-২ ব্লকের ফুলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের পর বিজয় উল্লাসে মাতেন বিজেপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। ফুলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন নৃপেন বিশ্বাস। উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন নীলিমা বর্মন। ফুলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৪টি আসনের মধ্যে ২০টিতে জয়লাভ করে বিজেপি প্রার্থীরা। এদিন বোর্ড গঠন অনুষ্ঠানে বিজেপির জয়ী প্রার্থীরা উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের চার জয়ী প্রার্থী। বোর্ড গঠন হওয়ার পর প্রধান ও উপপ্রধান সহ বাকি পঞ্চায়েত সদস্যরা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকে বেরিয়ে আসার পর গেরুয়া আবির উড়িয়ে আনন্দ উল্লাসে মাতেন বিজেপির নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা।
বুধবার মান্তাদারি, শিকারপুর, পানিকৌরি বিন্নাগুড়ি এবং ফুলবাড়ি ১ ও ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হল। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধান এবং উপপ্রধান নির্বাচিত হল। এরমধ্যে শিকারপুর অঞ্চলের এসটি সংরক্ষিত আসনে প্রধান হলেন প্রভা কুজুর এবং উপপ্রধান রজনীকান্ত রায়। পানিকৌরির অঞ্চলের মহিলা সাধারণ সংরক্ষিত আসনে প্রধান হলেন পাপিয়া সরকার এবং উপপ্রধান বিমল রায়। মান্তাদারি অঞ্চলে সাধারণ আসনে প্রধান হলেন অর্চনা রায় এবং উপপ্রধান রাম ওরাওঁ। বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সাধারণ আসনে প্রধান হলেন সামিজউদ্দিন আহমেদ এবং উপপ্রধান মিনতি রায়। বোর্ড গঠনের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিধায়ক খগেশ্বর রায় জানান, এই জয় মা মাটি মানুষের জয়। মানুষের জয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন দল নির্বিশেষে সকলেই তাই দুহাতে তারা সমর্থন করেছে তৃণমূলকেই। এদিন জলপাইগুড়ি জেলা কিষান মোর্চার সভাপতি নকুল দাস বাম এবং তৃণমূল উভয় দলকেই কটাক্ষ করে বলেন, ‘বাম-তৃণমূল যতই রেষারেষি করুক না কেন! এরা ভাই ভাই। তাদের ফলাফলে তারা খুশি। ভবিষ্যতে আরও ফল ভালো হবে।’