মালদাঃ দিন দিন বাড়ছে অনলাইন প্রতারণার ঘটনা। পুজোর মরশুমে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে এই প্রতারণা চক্র। সাইবার ক্রাইম মোকাবিলায় পিছিয়ে নেই সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশও। শুধুমাত্র চলতি মাসে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করে মালিকদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে মালদার সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। তদন্তে প্রতারণা চক্রের ডেরা হিসেবে উঠে এসেছে সেই দেওঘরের নাম। প্রতারণার ঘটনা রুখতে জোরকদমে নেমে পড়েছে মালদা জেলা পুলিশ।
সাইবার ক্রাইম থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতারণাচক্রের বেশিরভাগ ঘটনা ঘটছে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে চাকরি, ডিস্ট্রিবিউটরশিপ, আসবাবপত্র বিক্রির পোস্ট করে ফাঁদে ফেলা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সম্প্রতি একটি নামী কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ দেওয়ার নামে ইংরেজবাজারের এক বাসিন্দার থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল প্রতারকরা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে কোন অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার হয়েছে সেই খোঁজ শুরু করে সাইবার ক্রাইম থানার অফিসাররা। এসমস্ত প্রতারণার ঘটনায় প্রতারকরা মৃত ব্যক্তিদের বা ভুয়ো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে থাকে। এক্ষেত্রেও সেটাই সামনে আসে। ওই অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে প্রায় ৪৪ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।
ইন্টারনেটের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও সাইবার প্রতারণার হাত থেকে রেহাই মিলছে না সাধারণ মানুষের। সেক্ষেত্রে প্রতারণার জন্য এইপিএস-এর সুযোগ নিয়ে প্রতারণা চালাচ্ছে প্রতারকরা। এমনই একাধিক ঘটনার হদিশ মিলেছে মালদা জেলায়। এইপিএস অর্থাৎ আধার এনেবেলড্ পেমেন্ট সিস্টেম। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে উপভোক্তারা ফিঙ্গার প্রিন্ট বা আঙুলের ছাপ দিয়ে টাকার লেনদেন করে থাকেন। ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকা এধরণের লোকজনকে লুঠ করতে ফিঙ্গারপ্রিন্টকে ব্যবহার করছে প্রতারকরা। একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ জানতে পারে, এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে এভাবেই প্রায় ১০ হাজার টাকা উধাও হয়ে যায়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের অন্য গ্রাহক সেবা কেন্দ্র থেকে ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহার করে টাকা তোলা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ওই প্রতারিক ব্যক্তি জানান, প্রায় বছর দুয়েক আগে রেজিস্ট্রি অফিসে তিনি আঙুলের ছাপ দিয়েছিলেন। তারপরে আর কোথাও আঙুলের ছাপ তিনি দেননি। পুলিশের অনুমান দেওঘরের ওই চক্র রেজিস্ট্রি অফিসেও বাসা বাঁধতে পারে। কোনওভাবে সেই ফিঙ্গার প্রিন্ট যোগাড় করে সিলিকনের ওপর সেই প্রিন্ট নিয়ে প্রতারণা চক্র চালানো হচ্ছে।
ফেক সিমকার্ড, ফেক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করায় অপরাধীদের ধরতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয় পুলিশকে। সেক্ষেত্রে সাইবার ক্রাইম রুখতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে বেশি জোর দিচ্ছে মালদা জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের তরফে প্রচার চালানো হচ্ছে, নতুন সিম কেনা বা অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে কোনোমতেই একবারের বেশি ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তুলতে দেবেন না। যদি দ্বিতীয়বার তা চাওয়া হয়, তবে তা সঠিকভাবে যাচাই করুন। কোম্পানি অনুমোদিত বিক্রেতা ছাড়া রাস্তা থেকে সিম কার্ড না নেওয়াই ভালো। নিজের ব্যক্তিগত তথ্য ও তার জেরক্স কপি যত্ন করে রাখুন। নিজেদের নামে কতগুলি সিমকার্ড চালু আছে তা যাচাই করুন।
জেলা পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানান, “দূর্গা পুজোর আগে সাইবার প্রতারকরা অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা মেসেজের মাধ্যমে বিভিন্ন কেনাকাটায় ডিসকাউন্ট দেওয়া, খাওয়ারে হোম ডেলিভারি দেওয়ার কোম্পানির নামেও প্রতারণা চালানো হয়। এধরণের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে আমরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আরও বেশি জোর দিচ্ছি।”