সানি সরকার, শিলিগুড়ি: পাহাড়ের বিপর্যয়ে কাঠগড়ায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি সেবক-রংপো রেল প্রকল্প। তিস্তার ত্রাসে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে যেমন বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তেমনই রেল প্রকল্পটিতেও অশনিসংকেত মিলেছে। তিস্তা ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বড় একটা অংশ গিলে খাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে ঘোরতর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফলে বাংলা এবং সিকিমের মধ্যে ট্রেনের চাকা কবে গড়াবে, তা স্পষ্ট নয়। কাজ থমকে থাকার মূলে রয়েছে সিমেন্টে টান, ডিজেল ফুরিয়ে যাওয়া।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ইন্টার ন্যাশনাল (ইরকন)-এর সেবক-রংপো রেল প্রকল্পের ডিরেক্টর মহিন্দর সিং বলছেন, ‘প্রকল্প পর্যন্ত তিস্তার জল না পৌঁছানোয় সরাসরি কোনও ক্ষতি হয়নি প্রজেক্টের। তবে গেইলখোলা এবং তিস্তাবাজারের মধ্যে জাতীয় সড়ক নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত কিছু সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না। যা সামগ্রী রয়েছে, তা দিয়ে কাজ করা যাচ্ছে না ডিজেল না মেলায়।’
উত্তর সিকিমের সাউথ লোনাক লেক বিপর্যয় এবং এবং তার প্রভাবে তিস্তা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠায় এখনও বিধ্বস্ত সিকিম এবং বাংলার গ্রামের পর গ্রাম। যার জেরে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে তিস্তায় থাকা একের পর এক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং তিস্তাপাড়ের সেবক-রংপো রেল প্রকল্প নিয়ে। প্রয়োজনের তুলনায় ড্যামে জল ধরে রাখায় তিস্তার ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় চুংথাং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি মাটির সঙ্গে মিশেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডিকচু, সিংতাম, কালিঝোরার মত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি। রেল প্রকল্পটির জন্য তিস্তাপাড়ের পাহাড় আরও ভঙ্গুর হয়ে উঠেছে বলেও পরিবেশপ্রেমীদের বক্তব্য। এবার তিস্তার ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার জন্য মাসুল গুনতে হচ্ছে রেলকেও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৯ সালে প্রকল্পটির শিলান্যাস হলেও মূলত কাজ শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। নানা বিপর্যয়ে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে রেল প্রকল্পটি বন্ধ করার দাবি উঠেছে।
এবার তিস্তার ত্রাসে প্রকল্পটির প্রায় সমস্তরকম কাজ বন্ধ হয়ে গেল। ইরকন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার রাতেই সতর্ক বার্তা পেয়ে প্রকল্পটির কাজে যুক্ত শ্রমিক, কর্মীদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেন ইঞ্জিনিয়ার, আধিকারিকরাও। কিন্তু তেমন ঝাপটা না লাগায় বুধবার সকলেই কর্মস্থলে ফিরে আসতে পেরেছেন। কিন্তু দুদিন পর থেকেই তাঁরা কার্যত বেকার হয়ে রয়েছেন। ডিজেল শেষ হয়ে যাওয়ায় কোনও মেশিনই চালাতে পারছে না ইরকন। সাধারণ ঢালাইয়ের কাজ চললেও, তা দু-একদিনের বেশি চালানো যাবে না। কেননা, সিমেন্টও শেষ হওয়ার পথে। জাতীয় সড়ক তিস্তা গিলে নেওয়ায় এই পরিস্থিতি বলে জানাচ্ছেন ইরকন কর্তারা। গেইলখোলা এবং তিস্তাবাজারের মধ্যে নতুন করে জাতীয় সড়ক তৈরি না হওয়া পর্যন্ত যে রেল প্রকল্প গতি পাবে না, স্বীকার করে নিচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু তিস্তাবাজার ও গেইলখোলার মধ্যে কবে জাতীয় সড়কের কাজ শুরু হবে, নিশ্চিত নয় কেউই। অর্থাৎ সেবক-রংপোর দুই প্রান্তই বন্ধ হয়ে থাকায়, রেল প্রকল্পটির কাজ থমকে গিয়েছে।
এদিকে, সরাসরি প্রকল্পটি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও একটি ঠিকাদারি সংস্থার একটি প্ল্যান্ট এবং সেখানে থাকা যাবতীয় সামগ্রী তিস্তার গর্ভে চলে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।