বিশ্বজিৎ সরকার, হেমতাবাদ: একসময় খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল রায়গঞ্জের বিন্দোলের জালিপাড়া। সংসারে অভাব। তাই পরিবারের অনেকে ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিজেদের কিডনি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই রাজ্যজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। মন্ত্রী থেকে আমলারা গ্রামে এসে ঘুরে গিয়েছেন। মিলেছে ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি। কিন্তু তারপর ১১ বছর কেটে গেলেও গ্রামের হাল বদলায়নি। এখনও অনেকেই লুকিয়ে চুরিয়ে কিডনি বিক্রি করেন বলে অভিযোগ।
লোকসভা ভোট আসতেই ফের এই গ্রামে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা। গ্রামের অনুন্নয়নকে হাতিয়ার করে দলগুলি একে অপরের কাঁধে দোষ চাপিয়ে নির্বাচনি প্রচারে নেমে পড়েছে। এলাকায় কাজ না পেয়ে জালিপাড়ার অধিকাংশ যুবক ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে যান। স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, ‘গত তিন দশকে অভাব এতটাই তাড়া করে বেরিয়েছে যে, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় অনেকে বাধ্য হয়ে কিডনি বিক্রি করে দিয়েছেন। একাজ করতে গিয়ে অনেকে অকালে মারাও গিয়েছেন।’
জালিপাড়ার বাবলু জালির কথায়, ‘মেয়ের বিয়ের জন্য কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।’ চিয়ারু জালির বক্তব্য, ‘স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে চরম কষ্টে ছিলাম। সেই কারণে একটি কিডনি বিক্রি করে বাড়ির সামনে মুদির দোকান দিই।’
এলাকার বাসিন্দা ভবেশ জালি, সুরেশ জালির অভিযোগ, প্রতিবছর ভোটের আগে মন্ত্রীরা দামি গাড়ি চেপে গ্রামে ঢুকে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু সামান্য ১০০ দিনের কাজও মেলেনি। বছর তিনেক আগে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান লায়লা খাতুন ১০০ দিনের প্রকল্পে কয়েক কোটি টাকা তছরুপ করার অভিযোগে জেল পর্যন্ত খেটেছেন। এই প্রকল্পের কাজ দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ। ফলে চরম সমস্যায় বাসিন্দারা।
গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান জিন্নাতুন খাতুন বলেন, ‘গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। সবে দায়িত্ব পেয়েছি। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ যাতে গ্রামের বাসিন্দারা করতে পারেন, তার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হবে।’
স্থানীয় বিজেপি নেতা হরেন বর্মনের বক্তব্য, ‘তৃণমূলের ব্যর্থতায় এই গ্রামে কোনও উন্নয়ন হয়নি। গ্রাম পঞ্চায়েতে একাধিক দুর্নীতি হয়েছে। ১০০ দিনের কাজে দেড় কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে।’
গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা শাহিদ আলির দাবি, ‘জালিপাড়া গ্রামের জন্য তৃণমূল সরকার একাধিক প্রকল্পের কাজ করেছে। ভবিষ্যতে এই গ্রামকে মডেল গ্রাম করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।’