পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: চা শিল্পের পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালাতে উত্তরবঙ্গের বৃহৎ চা বাগানে (Tea Garden) বৃষ্টি পরিমাপের যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা নিল আবহাওয়া বিভাগ। পাইলট প্রকল্প হিসেবে জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri), ডুয়ার্স (Dooars) এবং শিলিগুড়ির (Siliguri) তরাই এলাকার ৫০টি চা বাগানে এই যন্ত্র বসানো হবে। চলতি বছর বর্ষা শুরুর আগেই ২০টি রেইন গেজ স্টেশন (Rain Gauge Station) বসানো হচ্ছে বলে সিকিম আবহাওয়া বিভাগের অধিকর্তা ও উত্তরবঙ্গের মুখপাত্র গোপীনাথ রাহা জানিয়েছেন। এতে চা বাগান ও সংলগ্ন এলাকার বৃষ্টিপাতের পরিমাপ জানা সম্ভব হবে। ফলে চা বাগানগুলিকে চা চাষে এই তথ্য সাহায্য করবে। অন্যদিকে বৃষ্টির পরিমাণ জানতে পারায় স্থানীয় এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা আছে কি না তাও জানা সম্ভব হবে। রাজ্যে এই ধরনের পরিকল্পনা এবারই প্রথম বলে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে।
উত্তরবঙ্গে এই মুহূর্তে তাপপ্রবাহ চলছে। অনাবৃষ্টি চা চাষের উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। কখন বৃষ্টি হবে সেই আশায় চাতক পাখির মতো দিন গুনছে চা বাগানগুলি। তাই কত পরিমাণ বৃষ্টি হল, সেই বৃষ্টির কারণে চা চাষের উন্নতিতে কী কী করা যেতে পারে তা বুঝতে পারবে চা বাগানগুলি বলে গোপীনাথ জানিয়েছেন। তাই বেশ কিছু চা বাগানে রেইন গেজ স্টেশন করার জন্য সম্মতিপত্র পাওয়া গিয়েছে। গোপীনাথ বলেন, ‘চা বাগানগুলিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ৫০টি রেইন গেজ স্টেশন বসানো হবে। বৃষ্টিপাতের পরিমাপ জানার সঙ্গে তাপমাত্রার হিসেব জানতেও এই স্টেশনগুলি খুব সাহায্য করবে।’
ডুয়ার্সের অনেক নদীতেই হড়পা হয়ে থাকে। কিন্তু হড়পা কখন আসবে কেউ জানতে পারে না। নইলে ২০২২ সালে মাল নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের দিন হড়পায় ৮ জনের মৃত্যু হয় কী করে? ডুয়ার্সের অধিকাংশ চা বাগান ভুটান সীমান্তে রয়েছে। তাছাড়া কার্সিয়াং এবং কালিম্পং সীমানার কাছাকাছি অবস্থিত। এই আন্তঃজেলা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী এলাকার চা বাগানেও ফ্ল্যাশ ফ্লাড হয়ে থাকে। পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টির খবরাখবর অধিক সময় জানা যায় না। যেমন কালিম্পং, গরুবাথানের মতো পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি হলে সবসময় ভারী বৃষ্টির খবর মেলে না। ফলে মালবাজার, নাগরাকাটা, মেটেলির নদীগুলির হড়পার খবরের আগাম পূর্বাভাস দেওয়া যায় না। ওই স্টেশনগুলি বসানোর পর পূর্বাভাস দেওয়া যাবে।
ডুয়ার্সের বীরপাড়া, মাদারিহাট, কালচিনি, ফালাকাটা ও বানারহাট, ধূপগুড়ি এবং নাগরাকাটার মতো এলাকাগুলিতে স্থানীয় স্তরে একনাগাড়ে বৃষ্টির পাশাপাশি ভুটান সীমান্তের বৃষ্টির কারণে বন্যা হয়ে থাকে। ভুটান সরকার বৃষ্টিপাতের সব খবর দেয় না। জলঢাকা, রায়ডাক, সংকোশ ও তোর্ষার উপর বৃষ্টির খবর দেয়। ফলে ডুয়ার্সের ভুটান সীমান্তবর্তী ৭৪টি ছোটখাটো নদী দিয়ে পাহাড়ের থেকে বৃষ্টির জল নেমে আসে। সেই খবর পাওয়া যায় না। তাই ভুটান সীমান্তবর্তী এলাকার চা বাগান এলাকা ছাড়াও সংলগ্ন ভুটান সীমান্তের বৃষ্টির খবর পাওয়া সম্ভব হবে। ফলে এলাকাবাসীদেরও আগাম সরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘আবহাওয়া দপ্তরকে কয়েকটি চা বাগানে রেইন গেজ স্টেশন বসানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।’