রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (North Bengal Medical) দালালচক্রের মাত্রাছাড়া দাপট চলছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা অধিকাংশ রোগী সহায়তা কেন্দ্রগুলি (Patient Support Center) বন্ধ। একটিমাত্র কেন্দ্র চলছে। বাকিগুলির কর্মীদের হাসপাতালের অন্য নানা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে, শুধুমাত্র রোগী সহায়তার জন্য মেডিকেলে এখন আর কোনও আলাদা কাউন্টার নেই। যার জেরে রোগীরা বহু সময় দালালদের খপ্পড়ে পড়ছেন। মেডিকেলের ডেপুটি সুপার সুদীপ্ত মণ্ডল এ সম্পর্কে বলেন, ‘জরুরি বিভাগের পাশে একটি ঘরে রোগী সহায়তা কেন্দ্র আছে। সেখানেই রোগী ও পরিজনরা যে কোনও বিষয়ে সাহায্য নিতে পারেন। শীঘ্রই মেডিকেলে পৃথক রোগী সহায়তা কেন্দ্র তৈরি হবে। সে কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে।’
মেডিকেলে চিকিৎসা (Medical Services) করাতে আসা রোগীদের বেশিরভাগ সময় নির্দিষ্ট ওয়ার্ড চিনতে নম্বরের উপর নির্ভর করতে হয়। রক্ত পরীক্ষার জন্য চার নম্বর, ট্রলি ২৫ নম্বর, শিশুদের বহির্বিভাগ ১২ নম্বর, অর্থোপেডিকের বহির্বিভাগ ১৩ নম্বর, টিকিট কাউন্টার ছয় নম্বর ঘর চিহ্নিত। এভাবেই প্রতিটি বিভাগকে নম্বর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু কোথাও সেভাবে কোন ওয়ার্ড, কত নম্বর তা ডিসপ্লে করা নেই। ফলে, নিয়মিত সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ। এই সমস্যা কাটিয়ে তাঁদের সাহায্যের জন্য ২০১৬ সালে মেডিকেলে রোগী সহায়তা কেন্দ্র তৈরি হয়। শিলিগুড়ির রেডক্রস সোসাইটি থেকে ১৬ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে এজন্য নেওয়া হয়। তাঁরা মেডিকেলের নানা স্থানে সহায়তা কেন্দ্রগুলিতে কাজ করতেন। কিন্তু সেগুলি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
বর্তমানে জরুরি বিভাগের পাশের ঘরে একটি কেন্দ্র চলছে। তবে, সেখানে যে শুধু রোগীর সহায়তায় কর্মীরা রয়েছেন তেমনটা নয়, তাঁদের স্বাস্থ্যসাথী থেকে অন্তর্বিভাগে রোগী ভর্তি, ছুটির হিসাব, অ্যাম্বুল্যান্সের হিসাব রাখা, রোগীদের জন্য প্রয়োজনে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করার মতো সব কাজই করতে হয়। অথচ ঘরটির বেহাল অবস্থা। হামেশাই সাপ ঢুকে পড়ে বলে কর্মীদের অভিযোগ।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ১৬ জন কর্মীর মধ্যে নয়জন এখানে দৈনিক আট ঘণ্টা করে রোটেশনভিত্তিক কাজ করেন। জননী সুরক্ষা যোজনায় চারজন, প্যাথোলজিতে দুজন, টিকিট কাউন্টারে একজন থাকেন। শেষোক্তজনকে হাসপাতালে কর্মীর অভাব থাকায় মাঝেমধ্যেই সেখানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। রোগী সহায়তা কেন্দ্রের জন্য নেওয়া কর্মীদের দিয়ে অন্য কাজও করানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রোগীরা সেভাবে সহায়তা পাচ্ছেন না। মঙ্গলবার মেডিকেলের টিকিট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে বাগডোগরার উত্তম বাড়ুইয়ের প্রশ্ন, ‘১৩ নম্বর কাউন্টারে যেতে বলল। সেটি কোন দিকে বলতে পারবেন?’ দাবি উঠেছে, দালালচক্র রুখতে মেডিকেলে আগের মতো ফের একাধিক স্থানে রোগী সহায়তা কেন্দ্র খোলা হোক।