সানি সরকার, শিলিগুড়ি: দীর্ঘ বিরতির পর দিনভরের বৃষ্টিতে স্বস্তি। ধুলোয় ঢাকা গাছগাছালি ফের সবুজ। পাতা ঝড়া রুক্ষ গাছগুলি যে বৃষ্টির জল পেয়ে নতুন প্রাণ ফিরে পাবে নিশ্চিত। রাত হলে আর ধোঁয়ায় ঢাকা পড়বে না শহর, নিশ্চিত শিলিগুড়ি। কিন্তু আবহাওয়া দপ্তরের টানা বৃষ্টির পূর্বাভাসে কিছুটা হলেও চিন্তার ভাঁজ রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। দুয়ারে যখন লোকসভা ভোট, তখন তার প্রস্তুতি পণ্ড হবে না তো, ভাবনায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব।
বৃষ্টির অপেক্ষায় কার্যত চাতক পাখি হয়ে উঠেছিল উত্তরবঙ্গের বাকি এলাকার সঙ্গে শিলিগুড়ি। বসন্তেও গ্রীষ্মের আবহ থাকায় ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছিল অনেক জায়গাতেই। কিন্তু আবহাওয়ার মতিগতিতে পাহাড় থেকে সমতল, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির ভ্রুকুটি থাকায়, অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। মূলত রাজনৈতিক দলের নেতারা। এখনও তৃণমূল কংগ্রেসের বাইরে দার্জিলিংকেন্দ্রে কোনও রাজনৈতিক দলই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। কিন্তু প্রতিটি দলই ভোটের প্রস্তুতি বা প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচনি কৌশল নির্ধারণে প্রতিটি দলীয় কার্যালয়েই দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। নানাভাবে জনসংযোগ শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরামহীন বৃষ্টি সমস্ত কিছুতে ব্যাঘাত ঘটাবে না তো, সামনে চলে আসছে এমন প্রশ্ন। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শংকর মালাকার মনে করেন, ‘বৃষ্টি হলে ভালো রকম ব্যাঘাত ঘটবে। মূলত প্রচারকে তুঙ্গে পৌঁছে দেওয়া যাবে না। তবে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সমস্ত কাজ করতে হবে।’
লোকসভা নির্বাচনের জন্য বুধবার পাঁচটি বিধানসভার প্রস্তুতি বৈঠক ছিল বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক কার্যালয়ে। দলীয় সূত্রে খবর, এদিন বিকেলের হালকা বৃষ্টি হলেও শহরের বাইরে থাকা অনেক নেতাই বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। তবে দলের জেলা সভাপতি অরুণ মণ্ডল বলছেন, ‘বৃষ্টিকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখতে হবে। বৃষ্টি হলে তার মধ্যেই ভোটের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের সাধ্যি তো আমাদের নেই।’ তৃণমূলের প্রার্থী প্রাক্তন আমলা গোপাল লামা। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় কর্মীসভা করছেন। তিনি। এদিন তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামার কর্মীসভা ছিল ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিধাননগরে। সভায় যোগ দিতে গিয়ে তাঁকে কিছুটা ভিজতে হয়।
গোপাল বলছেন, ‘বৃষ্টি সত্যি সমস্যা ডেকে এনেছে। টানা বৃষ্টি হলে সবদিক দিয়েই সমস্যা হবে। তবে লড়াই তো চালিয়ে যেতে হবে।’ জোটের ‘জটে’ দার্জিলিং কেন্দ্রে এখনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারেনি সিপিএম। তবে দুই রাস্তা খোলা রেখে নির্বাচনি প্রস্তুতি সেরে রাখছে। এদিনও অনিল বিশ্বাস ভবনে সিপিএমের একটি বৈঠক হয়। ঘরোয়া বৈঠক হওয়ায় তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি বলে সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য। দলের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সমন পাঠকের বক্তব্য, ‘চা বাগান ও কৃষিক্ষেত্রের জন্য বৃষ্টি অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। দূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। তবে টানা বৃষ্টি হলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কিছুটা তো সমস্যা হবেই।’ বিক্ষিপ্তভাবে হলেও উত্তরবঙ্গে অন্তত সাতদিনের বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর।