শতাব্দী সাহা, চ্যাংরাবান্ধাঃ দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে উত্তরবঙ্গে দেখা মেলেনি বৃষ্টির। এই অনাবৃষ্টির কারণে ব্যপক প্রভাব পড়েছে তরাই ডুয়ার্সের চা বাগান গুলিতে। তীব্র জলসংকটে ফার্স্ট ফ্লাশের উৎপাদনে প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন চা চাষীরা। সেই আশঙ্কায় খানিকটা হলেও জল ঢেলে দিল বৃষ্টি। বসন্তে অকাল বর্ষণে হাসি ফুটেছে চা চাষীদের মুখে।
ফার্স্ট ফ্লাশের চা স্বাদে-গন্ধে সবচেয়ে ভালো হয়। আর এই চায়ের ব্যপক চাহিদাও রয়েছে বিশ্ববাজারে। দামও মেলে একটু বেশিই। এই সময়ের চায়ের ফলন বাড়াতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের। বড়বড় চাবাগান গুলোতে জলসেচের সুবন্দোবস্ত থাকলেও, ক্ষুদ্র চা চাষীদের পক্ষে সেচের বন্দোবস্ত করা একপ্রকার দুঃসাধ্য। টানা পাঁচ মাস বৃষ্টি না থাকায় ঘোর সংকট তৈরি হয়েছিল চা শিল্পে। একে শুখা মরসুমে উৎপাদন বন্ধ, অন্যদিকে ফার্স্ট ফ্লাশে প্রভাব পড়লে বড় ক্ষতির সম্মুখিন হতে হত। অবশেষে সেই আশঙ্কার কালো মেঘ কেটে গিয়েছে বৃষ্টিতে। মঙ্গলবার রাত থেকে উত্তরের জেলা গুলোতে শুরু হয়েছে মাঝারি বৃষ্টিপাত। বুধবারও দিনভর বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবওহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস বলছে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকতে শুরু করেছে উত্তরের আকাশে। আরও তিন-চার দিন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সময়ের বৃষ্টি তামাক, আলু চাষের পক্ষে ক্ষতিকারক হলেও চা চাষের জন্য আশির্বাদস্বরূপ। মঙ্গলবার রাত থেকেই উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি মেখলিগঞ্জ চ্যাংরাবান্ধায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এতেই আশায় বুক বেঁধেছেন এই অঞ্চলের চাষীরা। চ্যাংরাবান্ধার ক্ষুদ্র চা চাষী লুৎফর রহমানের কথায়, “জলের অভাবে মাটি শুকিয়ে কাঠ। বৃষ্টির তো নাম গন্ধ নেই। তার মধ্যে রোদের তীব্র তেজে পাতা ঝলসে ও কুঁকড়ে গিয়েছিল। মোটর ভাড়া করে জল দিতে প্রচুর ধার দেনা হয়ে যায়। অবশেষে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আমাদের খুব উপকার হল। নইলে বড় ক্ষতি হয়ে যেত।”
এই বিষয়ে মেখলীগঞ্জ ব্লকের সানিয়াজান ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক আশরাফুল আজাদের মন্তব্য, “মেখলীগঞ্জ ব্লক রয়েছে প্রায় ১০ হাজার ক্ষুদ্র চা চাষী। বড় বাগানের মতো ক্ষমতা তাদের নেই। তাই শ্রমিক নিয়োগ করে, পাম্প ভাড়া করে জলসেচের কাজ করতে খুব আর্থিক সমস্যা হয়। আশাবাদি, এই বৃষ্টির ফলে চায়ের পাতার ফলন খুবই ভালো হবে। বৃষ্টির জন্য বাগানের পোকামাকড় অনেক কমে যাবে। বৃষ্টির ছোঁয়ায় গাছ সতেজ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টি কমলে সার প্রয়োগ করা হবে বাগানে। চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে।”
বৃষ্টিতে খুশি চা কারখানার মালিকরাও। চ্যাংরাবান্ধার চা কারখানার মালিক দিলীপ পারেখ বলেন, “ফার্ষ্ট ফ্লাশের ফলন এবার একদম ভালো হয়নি। এখন বৃষ্টিতে পাতার গুনগত মান ভালোই হবে আশা করছি। এখন আমরা সবাই সেকেন্ড ফ্লাসের আশায় আছি। এইবার ভালো দাম পাওয়া যাবে পাতার।”