সানি সরকার, শিলিগুড়ি: পূর্বাভাস আছে বটে, কিন্তু বৃষ্টিহীন উত্তরবঙ্গ। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দাপটে মঙ্গলে তুষারপাতের শর্ত মেনে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নভাবে একপশলা বৃষ্টি হলেও, ঘাটতি পূরণে তা ব্যর্থ। ফলে শুষ্ক আবহাওয়া সর্বত্র।
আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুসারে, বৃষ্টির ঘাটতি ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে একশো শতাংশে। ফলে চা চাষে তো অশনিসংকেত দেখা দিয়েইছে, অন্য ফসলেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অবশ্য এখন ভারী বৃষ্টি হলে আলুচাষিদের মাথায় হাত পড়বে বলে মনে করছেন অনেক কৃষি আধিকারিকই। তবে কিছুদিনের মধ্যে ভারী বৃষ্টি না হলে ঘাটতির প্রভাব সুদূরপ্রসারি হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও এখনই সুখবর দিতে পারছে না আবহাওয়া দপ্তর। কেননা, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দাপট অব্যাহত থাকলেও ভারী বৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহার বক্তব্য, ‘এই সময়ের বৃষ্টি মূলত নির্ভর করে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার তীব্রতার ওপর। কিন্তু শীতকালীন আবহাওয়ায় এখনও পর্যন্ত সমতলে ভারী বৃষ্টি হওয়ার মতো শক্তিশালী ঝঞ্ঝার দেখা মেলেনি। তবে এটা তেমন কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতির পরিবর্তনে এমনটা ঘটে থাকে।’
তুষারকণায় ভিজছে পাহাড়। উত্তর সিকিমজুড়ে ধারাবাহিকভাবে তুষারপাত হচ্ছে। মঙ্গলবার তুষারে ঢাকা পড়েছিল সান্দাকফু, টুমলিং, ফালুট সহ দার্জিলিংয়ের একাধিক জায়গা। কিন্তু বৃষ্টির জলে মাটি ভিজছে না সমতলে। ফলে দিন-দিন দূষণ যেমন বাড়ছে, তেমনই ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা দানা বাধছে কৃষিবলয়ে। মূলত চা বাগিচা অঞ্চলে। সাধারণত এসময়ের বৃষ্টি চা গাছে কচি পাতা বের হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে ওঠে। ফার্স্ট ফ্লাসে আশার আলো দেখতে পায় চা বাগানগুলি। কিন্তু ৭ ডিসেম্বরের পর এই অঞ্চলে বৃষ্টি না হওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন বাগান মালিকরা। টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের আধিকারিক তৃণা মণ্ডলের বক্তব্য, ‘ফার্স্ট ফ্লাসের আগে বৃষ্টি আবশ্যক। কিন্তু তা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কৃত্রিম উপায়ে গাছে জল দিতে হওয়ায় সেচের খরচ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।’
বৃষ্টির ঘাটতির প্রভাব পড়তে চলেছে কৃষিক্ষেত্রেও। এই সময় বৃষ্টি হলে তা ভুট্টা এবং রবি চাষের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে ওঠে। জলপাইগুড়ির সহকারী কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) পাপিয়া ভট্টাচার্য বলছেন, ‘রবি চাষে যে কিছুটা প্রভাব পড়ছে, তা অস্বীকার করা যায় না। তবে এখন ভারী বৃষ্টি হলে আলু চাষে ক্ষতি ডেকে আনবে। কেননা, এখনও অনেক চাষি মাঠ থেকে সম্পূর্ণভাবে আলু তোলেননি।’ একই কথা জানান কৃষি দপ্তরের উত্তর দিনাজপুরের ডেপুটি ডিরেক্টর পার্থ রায়। তিনি বলছেন, ‘বৃষ্টি অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু মাঠে আলু থাকায় এখন ভারী বৃষ্টি হলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে চাষিদের।’