চাঁদকুমার বড়াল ও মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার : সহায়কমূল্যে ধান বিক্রিতে কৃষকরা যাতে আরও আগ্রহী হন সেজন্য রাজ্য সরকার উদ্যোগী হল। রাজ্যজুড়ে ধান কেনার গতি তলানিতে ঠেকেছে। খোলাবাজারে ধানের দাম ভালো থাকায় কৃষকরা সেদিকেই ঝুঁকছেন। পরিস্থিতির বদল ঘটতে খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তর সহায়কমূল্যে ধান কেনায় একগুচ্ছ নতুন নির্দেশ জারি করেছে। এর জেরে কৃষকরা বেশ কিছু সুবিধা পেতে চলেছেন। ধান বিক্রির ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক বা আঙুলের ছাপ মেলানোর মতো বিষয়টি এতদিন বাধ্যতামূলক থাকলেও তা এবারে তুলে নেওয়া হল। এতদিন সহায়কমূল্যে প্রতি কুইন্টাল ধান বিক্রিতে ২০৪০ টাকা মিললেও তা বাড়িয়ে ২১৮৩ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি কুইন্টালে ১৪৩ টাকা দাম বেশি মিলবে। এছাড়া, কুইন্টাল পিছু আরও ২০ টাকা করে উৎসাহভাতা দেওয়া হবে। পাশাপাশি, এতদিন সর্বোচ্চ ৪৫ কুইন্টাল পর্যন্ত ধান বিক্রি করা গেলেও তা বাড়িয়ে এবারে ৯০ কুইন্টাল করা হয়েছে। এছাড়া, রেজিস্ট্রেশন করাতে কৃষকদের ধান ক্রয়কেন্দ্রে উপস্থিত না হলেও চলবে। ধান বিক্রির জন্য তাঁরা অন্য জায়গা থেকেও রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কৃষকরা ধান বিক্রি তো করতে পারবেনই, পাশাপাশি, মোবাইল ক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামে শিবির করে ধান কেনা হবে।
কোচবিহার জেলা খাদ্য ও সরবরাহ আধিকারিক সুমন পুরকায়স্থ বলেন, ‘ধান কেনার ক্ষেত্রে দপ্তর একাধিক নতুন নিয়ম জারি করেছে। সেই নিয়মগুলি মাইকে করে বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করা হচ্ছে। তবে এই সমস্ত নতুন নিয়ম শুধুমাত্র বোরো ধান কেনার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।’ আলিপুরদুয়ার জেলা খাদ্যনিয়ামক বাবুলচন্দ্র ভক্ত বলেন, ‘কৃষকরা যাতে বর্ধিত সহায়কমূল্যে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ধান বিক্রি করেন, সে ব্যাপারে খাদ্য দপ্তর থেকে লিফলেট বিলি ও মাইকে প্রচার চালানো হবে।’
খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তর সূত্রে খবর, সহায়কমূল্যে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে আধার সংযুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক হওয়ার ফলে প্রত্যন্ত এলাকার বহু কৃষক সমস্যায় পড়েছেন। তাঁদের অনেকেরই আধার কার্ড নেই, থাকলেও অনেকের ক্ষেত্রে ভুলভ্রান্তি রয়েছে, বায়োমেট্রিকে আঙুলের ছাপ না মেলার মতো অনেক সমস্যা রয়েছে। পাশাপাশি, খোলাবাজারে অনেক সময় ধানের দাম বেশি মেলায় কৃষকদের অনেকেই বাইরে ধান বিক্রি করছেন। সমস্যার জেরে বোরো ধান বিক্রির গতি কমেছে। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই ধান বিক্রির সময় বায়োমেট্রিকে কারও আঙুলের ছাপ না মিললে মোবাইল ফোনে আসা ওটিপির সাহায্য নিয়ে তিনি ধান বিক্রি করতে পারবেন। সহায়কমূল্যে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে কুইন্টাল প্রতি ১৪৩ টাকা দাম বাড়ানোর পাশাপাশি ধান বিক্রির সর্বোচ্চ পরিমাণ ৯০ কুইন্টাল করা হয়েছে। যে সমস্ত কৃষক বেশি করে ধান ফলিয়েছেন, এই ব্যবস্থায় তাঁরা সুবিধা পাবেন। ধান বিক্রির জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে কৃষকদের এতদিন ধান ক্রয়কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হত। এর জেরে অনেকে সমস্যায় পড়ছিলেন। এবারে তাঁরা বাংলা সহায়তাকেন্দ্র থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। প্রয়োজনে নিজেদের মোবাইল ফোন থেকেও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
কী কারণে কৃষকরা সেভাবে সহায়কমূল্যে ধান বিক্রিতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না? তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সরকারিভাবে আগে যে দর দেওয়া হচ্ছিল, তার থেকে খানিকটা বেশি দামেই পাইকাররা গ্রামে ঘুরে ঘুরে ধান কিনছিলেন। ফলে কৃষকদের অনেকে বাড়িতে বসেই ভালো দর পাওয়ায় আর সরকারি ক্রয়কেন্দ্রমুখী হচ্ছিলেন না। তপসিখাতার এক ধান ব্যবসায়ী বললেন, ‘আমরা চাষিদের বাড়ি থেকে ২,১০০ টাকা কুইন্টাল দরে ধান কিনছি। এবারে ধানের বাজারদর বেশ কিছুদিন ধরে ভালো রয়েছে।’ সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে এবারে বেশি সহায়কমূল্য মিলতে চলায় কৃষকদের অনেকেই খুশি। সেপ্টেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারে ১০টি সহায়ককেন্দ্রের মাধ্যমে ধান কেনা হবে। এর মধ্যে একটি মোবাইল ক্রয়কেন্দ্রও রয়েছে। এখনও পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারে সহায়কমূল্যে ৯২ হাজার ৩৯২ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। এসব উদ্যোগের জেরে রাজ্যজুড়ে সহায়কমূল্যে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে গতি আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে।