পলাশবাড়ি: ঘড়ির কাঁটা ধরে বই পড়ার ফুরসত নেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রমা বর্মনের। বুধবার পরীক্ষা ছিল না। তাই সে বাবা-মায়ের সঙ্গে সটান চলে আসে চাষের জমির কাজে। যেখানে আর পাঁচজন পরীক্ষার্থী পড়ার চাপে হয়তো নাওয়া-খাওয়া ভুলে যাচ্ছে। সেখানে একেবারেই বিপরীত রুটিন রমার।
তবে রমা একাই নয়। এদিন টমেটোখেতে রমার দিদি ভারতীকেও কাজ করতে দেখা গিয়েছে। সে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। আর কয়েকদিন পরেই সেই পরীক্ষা। মাঝেমধ্যেই দু’বোনকে মাঠের কাজ করতে দেখেন এলাকাবাসী৷ আবার স্কুলেও যায়। বাড়িতে সংসারের কাজও সামলায়।
আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ মেজবিল গ্রামের দুই বোন এভাবেই বড় হচ্ছে। একটাই লক্ষ্য, ভবিষ্যতে চাকরি পেয়ে বাবা-মায়ের দুঃখ ঘোচাতে হবে।
এদিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার ধারেই টমেটোখেতে কাজে ব্যস্ত বর্মন পরিবার। রমাদের বাবা বিপিন বর্মন জানালেন, ‘মাত্র এক বিঘা জমিতে ধান, পাট ও সবজির চাষ করি। তার আয় দিয়ে সংসার চলে না।’ তাই চাষের কাজের ফাঁকে বিপিনকে রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজও করতে হয়। আর মা বাসন্তী বর্মনকে অন্যের জমিতে দিনমজুরি করতে হয়। বিপিনের কথায়, ‘৬ বছর আগে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। টানাটানির সংসার। অন্য দুই মেয়েই স্কুলে পড়ছে। ওদের সেভাবে চাপ দিই না। কিন্তু তবু মাঝেমধ্যে জমির কাজে চলে আসে।’
মা বাসন্তীর কথায়, ‘দুই মেয়ে যতদূর চায় পড়াব। দুজনই পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের কাজ সামলায়। ছেলে সন্তান নেই। তাই আমাদের কষ্ট দেখে ওরাও নিজের জমির কাজে চলে আসে।’
দুই বোনই শিলবাড়িহাট হাইস্কুলের ছাত্রী। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষার মাঝে এভাবে জমির কাজে আসায় পড়াশোনা ব্যহত হচ্ছে না? উত্তরে রমার বক্তব্য, ‘আমার পড়াশোনার রুটিনটাই আলাদা। ছোট থেকে এভাবেই চলছে। বাবা-মা রোজ কষ্ট করেন। তাই এদিন সকাল দশটা পর্যন্ত পড়ে জমিতে চলে এসেছি। আবার বাড়িতে গিয়ে পড়ব।’
একই রুটিন দিদি ভারতীরও। তার কথায়, ‘এভাবেই কলেজ পর্যন্ত পড়ে চাকরির পরীক্ষায় বসব। ভবিষ্যতে চাকরি পেয়ে বাবা-মা’র মুখে হাসি ফোটাতে চাই।’
একেবারেই দুঃস্থ পরিবার। এজন্য দুই বোনের কেউ টিউশনও পড়ে না। প্রতিবেশী সুরেন্দ্রনাথ বর্মনের কথায়, ‘একই এলাকায় আরও অনেক বাড়িতেই ছাত্রী আছে। তবে ওই দুই বোন যেভাবে সব সামলে পড়াশোনা করছে তা ব্যতিক্রমী।’