সানি সরকার, রংপো-মাঝিটার (সিকিম): ডানে অথবা বাঁয়ে, পাকদণ্ডির দুই পাশে অপরিচিত তিস্তা। নীল জল আর নেই। ঘোলাটে জলের তিস্তার গর্ভে এবং দু’পাশে শুধুই পলির আস্তরণ। অনেকটা সংকীর্ণ হয়েছে নদীখাত।
গত ৪ অক্টোবর ত্রাস হয়ে ওঠা তিস্তার (Teesta) ছোবলের দাগ স্পষ্ট কালিঝোরা থেকে ২৯ মাইলে। হঠাৎ বিধ্বংসী হয়ে ওঠা তিস্তাকে সেতুতে বেঁধে আগামী বছর দুর্গাপুজোর আগে সেবক-রংপো রেলপ্রকল্পের কাজ শেষ করা দুস্তর চ্যালেঞ্জ। তা সামলে দেশের রেল মানচিত্রে সিকিমকে জুড়ে ফেলতে পারবেন বলেই দাবি করছেন রেলকর্তারা।
সোমবার দেশের ৫৫৪টি রেলস্টেশনের কাজের সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। এই তালিকায় রয়েছে রংপো স্টেশনের (Rangpo railway station) শিলান্যাস। যার প্রস্তুতি রবিবার খতিয়ে দেখেন আলিপুরদুয়ারের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার অমরজিৎ গৌতম। প্রকল্পের খুঁটিনাটি এবং কাজের অগ্রগতি নিয়ে তিনি কথা বলেন রেল আধিকারিক ও ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের (ইরকন) কর্তাদের সঙ্গে।
যদিও ডিআরএম দাবি করেন, ‘কাজ শেষ করার সময়সীমা এবছর থাকলেও, অক্টোবরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য তা হচ্ছে না। তবে আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি, তাতে আগামী বছর অগাস্টের শুরুতে সমস্ত কাজ শেষ করে দেওয়া সম্ভব। বাংলা এবং সিকিমের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে যাবে পুজোর মুখে।’ আগামী বছর অগাস্টে কাজ শেষ করে দেওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ইরকনের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর মহিন্দার সিং। তাঁর বক্তব্য, ‘১৪টি টানেলের মধ্যে আটটির খননকাজ শেষ। এই টানেলগুলিতে আগামী মাস থেকে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হয়ে যাবে। বাকি টানেলের কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। প্রত্যেকটি সেতুর পিলারের ভিত তৈরি শেষ। সেতু তৈরির ক্ষেত্রেও বেশি সময় লাগবে না।’ কিন্তু নদীখাতে জমা পলির কারণে তিস্তা যদি বর্ষার সময় আবার ভয়ংকর হয়ে ওঠে, তবে কি আগামী বছর পুজোর মুখে সেবক থেকে রংপো ট্রেনের চাকা গড়াবে? সংশয়ে রয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে রেলকর্তারাও।
ভয়টা যে বর্ষা এবং তিস্তা নিয়ে, তা সেবক থেকে রংপো পর্যন্ত তিস্তার দিকে এক ঝলক তাকালেই স্পষ্ট। কোথাও কোথাও তো জলের নীচের পলি দেখা যাচ্ছে। ফলে বর্ষার সময় কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তা থাকছে। কিন্তু এই আশঙ্কাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন রেলকর্তারা। চ্যালেঞ্জ তিস্তাকে শাসন করে রংপো স্টেশনকে বিশ্বমানের গড়ে তোলা। েসই কাজের শিলান্যাস হবে সোমবার, প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
বাস্তবে স্টেশনের জায়গা নির্দিষ্ট করে তার ভূমির পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ। এখন শুধু ভবন তৈরি বাকি। তিস্তাবাজার, মল্লি স্টেশনের কাজও অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। রেল সূত্রে খবর, ৪৪.৯৮ কিলোমিটারের রেলপ্রকল্পটির ৮৫ শতাংশই টানেলের মধ্যে।
এদিন ডিআরএম জানান, সেবক-রংপো রেলপ্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই রংপো-গ্যাংটক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যাবে। তৃতীয় পর্যায়ে হবে গ্যাংটক ও নাথু লা রেলপ্রকল্প। রেলের এক আধিকারিক জানালেন, এই প্রকল্প পর্যটনের দিগন্ত খুলে দেবে। তার থেকেও এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ দেশের সেনাবাহিনীর জন্য। চিনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা মোকাবিলায় এই রেলপথ অত্যন্ত জরুির।
রবিবার থেকেই মাঝিটারে উৎসাহের শেষ নেই। সোমবার কখন হবে অনুষ্ঠান, জানতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই। রেলকর্তারা বুঝতে পারছেন, ট্রেনে চেপে সমতলে নামতে সিকিম যতটা অধীর, পাহাড়ে গা বেয়ে ট্রেনে গ্যাংটকে পৌঁছাতে ততটাই উদ্গ্রীব সমতলের পর্যটকরা। তঁাদের সকলের প্রত্যাশা পূরণটাই আসল চ্যালেঞ্জ।