মেখলিগঞ্জ: নাবালিকাকে মাদক খাইয়ে তাঁর আপত্তিকর ছবি তোলার অভিযোগ উঠেছিল এক যুবকের বিরুদ্ধে। শুধু আপত্তিকর ছবি তোলাই নয়, অভিযুক্ত সেই ছবি ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নাবালিকাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি টাকা দেওয়ার জন্য চাপও দেওয়া হয়। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি যুবক। সেই আপত্তিকর ছবিগুলি পাত্রপক্ষকে পাঠিয়ে নির্যাতিতার বিয়ে ভেঙেও দেয় সে। এরপর নাবালিকা আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরিবারের চেষ্টায় সে বেঁচে যায়। কিন্তু তারপরই ওই যুবকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখ কিশোরীর বাবা মেখলিগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়েই পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। ২০২২ সালের মে মাস থেকে বিচার শুরু হয়। বুধবার সেই মামলায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। শুক্রবার সাজা ঘোষণা হয়। কিশোরীর হয়ে সরকার পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘৬৭বি ধারা অর্থাৎ শিশু পর্নগ্রাফি আইন এবং ৬ নম্বর পকসো ধারা সহ বেশ কয়েকটি ধারায় ওই যুবককে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। আজ সর্বোচ্চ ২০ বছরের সাজা ঘোষণা করেন বিচারপতি হিরন্ময় সান্যাল।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলায় আপত্তিকর ছবি অভিযুক্তের মোবাইল থেকে সাক্ষীদের মোবাইলে পাঠানো হয়েছিল। সেটা পুণে থেকে ফরেন্সিক টিম এসে তদন্ত করেছিল। প্রযুক্তির সাহায্যে প্রমাণ করা গিয়েছে অশ্লীল ছবি অভিযুক্তের মোবাইল থেকেই পাঠানো হয়েছে সাক্ষীদের। এতেই বিচারপতি সন্তুষ্ট হয়ে ধৃতকে দোষী সাব্যস্ত করে মেখলিগঞ্জ অতিরিক্ত দায়রা আদালত।‘ সাইবার অপরাধে উত্তরবঙ্গে সর্বপ্রথম এটিই প্রথম রায় বলে দাবি করেন আইনজীবী বিভাস।
সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের নাম বিজয় রায় (২২)। সে চ্যাংরাবান্ধার বাসিন্দা। ওই গ্রামের এক কিশোরীর সঙ্গে তার পরিচয় হয় এক কোচিং সেন্টারে। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব। একদিন কিশোরীর বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল ওই যুবক। অভিযোগ, নাবালিকাকে পানীয়ের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে খাওয়ানো হয় বলে অভিযোগ। এরপরেই বিজয় তার বেশ কয়েকটি আপত্তিকর ছবি তুলে রাখে। সেই ছবি দেখিয়ে বারবার নাবালিকাকে ধর্ষণ করার অভিযোগও ওঠে। এমনকি বেশ কয়েকবার টাকাও চায়। কিশোরী অপমানের হাত থেকে বাঁচতে কন্যাশ্রীর টাকা তুলে বিজয়কে দিয়েছিল। তারপর সব চুপচাপ ছিল। তবে কিশোরীর ১৮ বছর হওয়ার পর তাঁর বিয়ে ঠিক করে পরিবার। বিজয় তা জানতে পেরে নাবালিকার আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে বিয়ে ভেঙে দেয়। তার জেরে নাবালিকা আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু মায়ের তৎপরতায় রক্ষা পায় কিশোরী। এরপরই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।