গাজোলঃ ডাম্পারের ধাক্কায় এক বৃদ্ধের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শনিবার উত্তপ্ত হল পান্ডুয়া সংলগ্ন চিনি দানা গ্রাম। ঘটনার পর উত্তেজিত গ্রামবাসী ব্যাপক ভাঙচুর চালায় দুটি ডাম্পার এবং একটি আর্থ মুভার মেশিনে। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় গাড়িগুলির সমস্ত কাজ। খুলে ফেলা হয় সমস্ত চাকার হাওয়া। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বেআইনিভাবে চলছে মাটি কাটার কাজ। প্রায় ৫০ ফুট গভীর করে খোঁড়া হচ্ছে একটি পুকুর। যার বেশিরভাগ জায়গা ওয়াকফ বোর্ডের। বেশ কিছু রয়েছে সরকারি খাস জমি। গ্রামবাসীরা বাধা দিলেও বন্ধ হয়নি পুকুর খোঁড়ার কাজ। পুকুর থেকে মাটি নিয়ে যাওয়া ডাম্পারের ধাক্কায় এর আগেও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। কিন্তু গতকাল সাইকেলে চেপে বাড়ি ফেরার সময় ডাম্পারের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান স্থানীয় এক বাসিন্দা বিজেন সরকার (৭২)। স্থানীয়রা বিজেন বাবুকে উদ্ধার করে পান্ডুয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এরপরই দেহটি উদ্ধার করে তড়িঘড়ি ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। এদিকে এই পথ দুর্ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই ঘটনাস্থলে জমায়েত হন প্রচুর স্থানীয় মানুষ। ঘটনাস্থলে চলে আসে গাজোল থানার পুলিশ। শুরু হয়ে যায় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের তুমুল বচসা। এরই মাঝে উত্তেজিত জনতা ব্যাপকভাবে ভাঙচুর শুরু করে দুটি ডাম্পার এবং একটি আর্থ মুভার মেশিনে। সব গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়। জনতার রনংদেহি পরিস্থিতি দেখে পালিয়ে যায় সমস্ত গাড়ির চালক। অবশেষে পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রকাশ বিশ্বাস জানালেন, ‘প্রায় তিন বছর ধরে বেআইনিভাবে এই গ্রামে মাটি মাফিয়ারা মাটি কেটে পাচার করছে। বিভিন্ন জায়গায় আমরা অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু বন্ধ হয়নি মাটি কাটার কাজ। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সরকারি দপ্তরের আধিকারিকসহ এলাকার জনাকয়েক নেতা। মাঝে মাঝে উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এসে তাড়া করলে কয়েকদিন বন্ধ থাকে মাটিচুরি। পরে ফের শুরু হয়ে যায় মাটি কাটার কাজ। এমনকি, ওয়াকফ বোর্ডের সম্পত্তি ছাড়াও খাস জমি থেকেও প্রচুর পরিমাণে মাটি কাটা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে সেই জায়গার নকশা প্রকাশ করা হোক। যতদিন পর্যন্ত না সরকার নকশা প্রকাশ করবে না ততদিন পর্যন্ত আমরা মাটি কাটতে দেব না।’